পাতা:কাঙ্গাল হরিনাথ (দ্বিতীয় খণ্ড) - জলধর সেন.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাঙ্গাল হরিনাথ ব্ৰহ্মাণ্ডবেদের মূলসূত্র সহজবোধ্য করিবার জন্য অতি সুন্দর রূপকের সৃষ্টি করিয়াছেন। গিরিরাজ হিমালয় ও গিরিরাণী মেনকা অনেক দিন তাঁহাদের কন্যা দুর্গাকে দর্শন করেন নাই ; তাই তঁহাদের হৃদয়ে দর্শনাকাজক্ষা জাগ্রত হইয়াছে। ইহারই নাম “আগমনী”। এই আগমনী অবলম্বন করিয়া কাঙ্গাল হরিনাথ সাধনসূত্ৰ প্ৰদৰ্শন করিয়াছেন। তিনি এই সূত্রের ব্যাখ্যা উপলক্ষে বলিয়াছেন যে, তুষার পড়িয়া পাষাণ যখন অতি শীতল হয় এবং সুৰ্য্যোত্তাপে যখন তাহা অতি উষ্ণ হয়, তখন তাহাতে বাস করা কঠিন হইয়া থাকে। পাষাণখণ্ডে কাহাকেও আঘাত করিলে সেই আঘাতও কঠিন হয়। মানুষ যখন ঈশ্বর ভুলিয়া ভোগবিলাস চরিতাৰ্থ করিবার জন্য স্বেচ্ছাচারী হইয়া উঠে, তখন তাহার সহিত বাস করা কঠিন হয়। সেই মানুষ আবার স্বার্থের নিমিত্ত যাহাকে আঘাত করে, সেই আঘাতও প্রস্তর-আঘাতবৎ কঠিন হয়। এই নিমিত্তে লোকে অত্যাচারী মানুষকে পাষাণ বলিয়া থাকে। আমাদের এই প্রসঙ্গের প্রধান নায়ক গিরিরাজ ও সেইরূপ পাষাণ এবং তঁহার পত্নী মেনকারাণীও সেইরূপ পাষাণী । কিঞ্চিৎ ভাবিয়া দেখিলে, প্ৰতি মানুষের হৃদয়েই গিরিরাজ ও মেনকা বিরাজ করিতেছেন, ইহা বিলক্ষণ বুঝিতে পারা যায়। বস্তুতঃ প্ৰতি মানবের আত্মাই গিরিরাজ এবং ভগবানের প্ৰেম-পিপাসাই মেনকা রাণী। এই আত্মা ও পিপাসা বিশুদ্ধ হইলেই সেই বিশুদ্ধ আত্মা ও পিপাসার যোগে ভগবান জন্মগ্রহণ করেন, অর্থাৎ প্ৰকাশিত হইয়া থাকেন। প্ৰেমপিপাসা মেনকাকে আশ্রয় করিয়া ভগবানের ক্ষণপ্ৰভার প্রথম প্ৰকাশ পায়, তাহার পর আত্মা সাধনপথে ক্রমে অগ্রসর হইতে থাকে। এই আগমনী প্ৰস্তাবে সাধনতত্ত্বের ক্রমোন্নতির আভাস প্ৰদত্ত হইয়াছে। মানুষ স্বেচ্ছাচার ও অত্যাচার করত; যতই কেন পাষাণবৎ কঠিন 8