কেবল এইমাত্র কহিলেন, হাঁ উপযুক্ত কর্ম্ম হইয়াছে। এবং তৎক্ষণাৎ গাত্রোত্থান করিয়া আপন আশ্রমে চলিয়া গেলেন। কাদম্বরী শুনিবামাত্র নিমীলিতনেত্র ও সংজ্ঞাশূন্য হইলেন। অনেক ক্ষণের পর নয়ন উন্মীলন করিয়া মদলেখাকে কহিলেন, মদলেখে! চন্দ্রাপীড় যে কর্ম্ম করিয়াছেন আর কেহ কি এরূপ করিতে পারে! এইমাত্র বলিয়া শয্যায় শয়ন করিলেন। তদবধি কাহারও সহিত কোন কথা কহেন নাই। পর দিন প্রভাত কালে আমি তথায় গিয়া দেখিলাম, কাদম্বরী সংজ্ঞাশূন্য, কেহ কোন কথা কহিলে উত্তর দিতেছেন না। কেবল নয়নযুগল হইতে অনবরত অশ্রুধারা পতিত হইতেছে। আমি তাঁহার সেইরূপ অবস্থা দেখিয়া অতিশয় চিন্তিত হইলাম এবং তাঁহাকে না বলিয়াই আপনার নিকট আসিয়াছি।
গন্ধর্ব্বকুমারীর বিরহবৃত্তান্ত শুনিতেছেন এমন সময়ে মূর্চ্ছা রাজকুমারের চেতন হরণ করিল। সকলে সসম্ভ্রমে তালবৃন্ত ব্যজন ও শীতল চন্দনজল সেচন করাতে অনেক ক্ষণের পর চেতন হইলেন। দীর্ঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ পূর্ব্বক কহিলেন, কাদম্বরীর মন আমার প্রতি এরূপ অনুরক্ত তাহা আমি পূর্ব্বে জানিতে পারি নাই। এক্ষণে কি করি, কি উপায়ে প্রিয়তমার প্রাণ রক্ষা হয়! বুঝি, দুরাত্মা বিধি বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটাইয়া আমাকে মহাপাপে লিপ্ত ও কলঙ্কিত করিবার মানস করিয়াছে। এ সকল দৈববিড়ম্বনা সন্দেহ নাই। নতুবা নিরর্থক কিন্নরমিথুনের অনুসরণে কেন প্রবৃত্তি হইবে? অচ্ছোদসরোবরেই বা কেন যাইব? মহাশ্বেতার সঙ্গেই বা কেন সাক্ষাৎ হইবে? গন্ধর্ব্বনগরেই বা কি জন্য গমন করিব? আমার প্রতি কাদম্বরীর অনুরাগসঞ্চারই বা কেন হইবে? এ সকল বিধাতার চাতুরী সন্দেহ নাই। নতুবা, অসম্ভাবিত ও স্বপ্নকল্পিত ব্যাপার সকল কি রূপে সংঘটিত হইল? এইরূপ ভাবিতে ভাবিতে দিবাবসান হইল। নিশি উপস্থিত হইলে জিজ্ঞাসিলেন, কেয়ূরক! তোমার কি বোধ হয় আমাদিগের গমন পর্য্যন্ত কাদম্বরী জীবিত থাকিবেন?
১৩