পাতা:কাদম্বরী.djvu/১০২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯৮
কাদম্বরী।

তাঁহার সেই পরম সুন্দর মুখচন্দ্র আর কি দেখিতে পাইব? কেয়ূরক কহিল, রাজকুমার! এই সংসারে আশাই জীবনের মূল। আশা আশ্বাস প্রদান না করিলে কেহ জীবিত থাকিতে পারে না। লোকেরা আশালতা অবলম্বন করিয়া দুঃখসাগরে নিতান্ত নিমগ্ন হয় না। আপনি নিতান্ত কাতর হইবেন না, ধৈর্য্যাবলম্বন পূর্ব্বক গমনের উপায় দেখুন। আপনি তথায় যাইবেন এই আশা অবলম্বন করিয়া গন্ধর্ব্বকুমারী কালক্ষেপ করিতেছেন, সন্দেহ নাই। অনন্তর রাজকুমার কেয়ূরককে বিশ্রাম করিতে আদেশ দিয়া কিরূপে গন্ধর্ব্বপুরে যাইবেন তাহাই চিন্তা করিতে লাগিলেন। ভাবিলেন যদি পিতা মাতাকে না বলিয়া তাঁহাদিগের অজ্ঞাতসারে গমন করি, তাহা হইলে কোথায় সুখ কোথায় বা শ্রেয়ঃ? পিতা যে রাজ্য-ভার দিয়াছেন সে কেবল দুঃখভার, প্রতিদিন পর্য্যবেক্ষণ না করিলে বিষমসঙ্কটের হেতুভূত হয়। সুতরাং তাঁহাকে না বলিয়া কি রূপে যাওয়া যাইতে পারে? বলিয়া যাওয়া উচিত; কিন্তু কি বলিব? গন্ধর্ব্বরাজকুমারী আমাকে দেখিয়া প্রণয়পাশে বদ্ধ হইয়াছেন, আমি সেই প্রাণেশ্বরী ব্যতিরেকে প্রাণ ধারণ করিতে পারি না, কেয়ূরক আমাকে লইতে আসিয়াছে, আমি চলিলাম, নিতান্ত নির্লজ্জ ও অসারের ন্যায় এ কথাই বা কি রূপে বলিব? বহুকালের পর বাটী আসিয়াছি; কি ব্যপদেশেই বা আবার শীঘ্র বিদেশে যাইব? পরামর্শ জিজ্ঞাসা করি এরূপ একটী লোক নাই। প্রিয়সখা বৈশম্পায়নও নিকটে নাই। এরূপ নানাপ্রকার চিন্তা করিতে করিতে রাত্রি প্রভাত হইল।

প্রাতঃকালে গাত্রোত্থান পূর্ব্বক বহির্গত হইয়া শুনিলেন, স্কন্ধাবার দশপুরী পর্য্যন্ত আসিয়াছে। শত শত সাম্রাজ্যলাভেও যেরূপ সন্তোষ না হয়, এই সংবাদ শুনিয়া তাদৃশ আহ্লাদ জন্মিল। হর্ষোৎফুল্ল নয়নে কেয়ূরককে কহিলেন, কেয়ূরক! আমার পরম মিত্র বৈশম্পায়ন আসিতেছেন, আর চিন্তা নাই। কেয়ূরক সাতিশয় সন্তুষ্ট হইয়া কহিল, রাজকুমার! মেঘোদয়ে যেরূপ বৃষ্টির