হইল। পৃথিবী জ্যোৎস্নাময়, চতুর্দ্দিক্ আলোকময়। সে সময় পথ চলার কোন ক্লেশ হয় না। চন্দ্রাপীড় দ্রুত বেগে অগ্রে অগ্রে চলিলেন। রাত্রি প্রভাত না হইতেই অনেক দূর চলিয়া গেলেন। স্কন্ধাবার যে স্থানে সন্নিবেশিত ছিল, প্রভাতে ঐ স্থান দেখিতে পাইলেন। গাঢ় অন্ধকারে আলোক দেখিলে যেরূপ আহ্লাদ জন্মে, দূর হইতে স্কন্ধাবার নেত্রগোচর করিয়া রাজকুমার সেইরূপ আনন্দিত হইলেন। মনে মনে কল্পনা করিলেন, অতর্কিত রূপে সহসা উপস্থিত হইয়া বন্ধুর মনে বিস্ময় জন্মাইয়া দিব।
ক্রমে নিকটবর্ত্তী হইয়া স্কন্ধাবারে প্রবেশিলেন। দেখিলেন কতকগুলি স্ত্রীলোক এক স্থানে বসিয়া কথা বার্ত্তা কহিতেছে। তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, বৈশম্পায়ন কোথায়? তাহারা রাজকুমারকে চিনিত না; সুতরাং সমাদর বা সম্ভ্রম প্রদর্শন না করিয়াই উত্তর করিল কি জিজ্ঞাসা করিতেছ, বৈশম্পায়ন এখানে কোথায়? আঃ কি প্রলাপ করিতেছিস্ রোষ প্রকাশ পূর্ব্বক এই কথা বলিয়া রাজকুমার তাহাদিগের যৎপরোনাস্তি তিরস্কার করিলেন। কিন্তু তাঁহার অন্তঃকরণ নিতান্ত ব্যাকুল ও চঞ্চল হইয়া উঠিল। অনন্তর কতিপয় প্রধান সৈনিক পুরুষ নিকটে আসিয়া বিনীত ভাবে প্রণাম করিল। চন্দ্রাপীড় জিজ্ঞাসা করিলেন, বৈশম্পায়ন কোথায়? তাহারা বিনয়বচনে কহিল, যুবরাজ! এই তরুতলে শীতল ছায়ায় উপবেশন করুন, আমরা সমুদায় বৃত্তান্ত বর্ণন করিতেছি। তাহাদিগের কথায় আরও উৎকণ্ঠিত হইয়া জিজ্ঞাসিলেন, আমি স্কন্ধাবার হইতে বাটী গমন করিলে কি কোন সংগ্রাম উপস্থিত হইয়াছিল? কি কোন অসাধ্য ব্যাধি বন্ধুকে কবলিত করিয়াছে? কি অত্যহিত ঘটিয়াছে? শীঘ্র বল। তাহারা সসম্ভ্রমে কর্ণে করক্ষেপ করিয়া কহিল না, না, অত্যহিত বা অমঙ্গলের আশঙ্কা করিবেন না। রাজকুমার প্রথমে ভাবিয়াছিলেন বন্ধু জীবদ্দশায় নাই; এক্ষণে সে ভাবনা দূর হইল ও শোকাশ্রু আনন্দাশ্রু রূপে পরিগণিত হইল। তখন গদ্গদ বচনে