পাতা:কাদম্বরী.djvu/১১১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাদম্বরী।
১০৭

যে প্রণয় তাহা বিলক্ষণ অবগত আছি। কিন্তু তাঁহার এই অনুচিত কর্ম্ম দেখিয়া আমার অন্তঃকরণ তোমার দোষ সম্ভাবনা করিতেছে। রাজার কথা সমাপ্ত না হইতে শুকনাস কহিলেন, দেব! যদি শশধরে উষ্ণতা, অমৃতে উগ্রতা ও হিমে দাহ্যশক্তি জন্মে, তথাপি নির্দ্দোষস্বভাব চন্দ্রাপীড়ের দোষশঙ্কা হইতে পারে না। একের অপরাধে অন্যকে দোষী জ্ঞান করা অতি অন্যায় কর্ম্ম। মাতৃদ্রোহী, পিতৃঘাতী, কৃতঘ্ন, দুরাচার, দুষ্কর্ম্মান্বিতের দোষে সুশীল চন্দ্রাপীড়ের দোষ সম্ভাবনা করা উচিত নয়। যে পিতা মাতার অপেক্ষা করিল না, রাজাকে গ্রাহ্য করিল না, মিত্রতার অনুরোধ রাখিল না, চন্দ্রাপীড় তাহার কি করিবেন? তাহার কি একবারও ইহা মনে হইল না যে, আমি পিতা মাতার একমাত্র জীবননিবন্ধন, আমাকে না দেখিয়া কি রূপে তাঁহারা জীবন ধারণ করিবেন। এক্ষণে বুঝিলাম কেবল আমাদিগকে দুঃখ দিবার নিমিত্তই সে ভূতলে জন্ম গ্রহণ করিয়ছিল। বলিতে বলিতে শোকে শুকনাসের অধর স্ফুরিত ও গণ্ডস্থল অশ্রু জলে পরিপ্লুত হইল। রাজা তাঁহার সেইরূপ অবস্থা দেখিয়া কহিলেন, অমাত্য! যেরূপ খদ্যোতের আলোক দ্বারা অনলপ্রকাশ, অনল দ্বারা রবির প্রকাশ, অস্মদ্বিধ ব্যক্তি কর্ত্তৃক তোমার পরিবোধনও সেইরূপ। কিন্তু বর্ষাকালীন জলাশয়ের ন্যায় তোমার মন কলুষিত হইয়াছে। কলুষিত মনে বিবেকশক্তি স্পষ্ট রূপে প্রকাশিত হয় না। সে সময়ে অদূরদর্শীও দীর্ঘদর্শীকে অনায়াসে উপদেশ দিতে পারে। অতএব আমার কথা শুন। এই ভূমণ্ডলে এমন লোক অতি বিরল, যাহার যৌবনকাল নির্ব্বিকার ও নির্দ্দোষে অতিক্রান্ত হয়। যৌবনকাল অতি বিষম কাল। এই কালে উত্তীর্ণ হইলে শৈশবের সহিত গুরুজনের প্রতি স্নেহ বিগলিত হয়। বক্ষঃস্থলের সহিত বাঞ্ছা বিস্তীর্ণ বাহুযুগলের সহিত বুদ্ধি স্থূল হয়। মধ্যভাগের সহিত বিনয় ক্ষীণ হয়। এবং অকারণেই বিকারের আবির্ভাব হয়। বৈশম্পায়নের কোন দোষ নাই, ইহা কালের দোষ। কি জন্য তাহার