যাইতে যাইতে পথিমধ্যে, মেঘনাদ আসিতেছে দেখিতে পাইলেন এবং জিজ্ঞাসা করিলেন, মেঘনাদ! তুমি অচ্ছোদসরোবরে বৈশম্পায়নকে দেখিয়াছ? তিনি তথায় কি নিমিত্ত আছেন, জিজ্ঞাসা করিয়াছ? তোমার জিজ্ঞাসার কি উত্তর দিলেন? তাঁহার কিরূপ অভিপ্রায় বুঝিলে, বাটীতে ফিরিয়া আসিবেন কি না? আমি গন্ধর্ব্বনগরে যাইব শুনিয়া কি বলিলেন? তোমার কি বোধ হয়, আমাদের গমন পর্য্যন্ত তথায় থাকিবেন ত? মেঘনাদ বিনীত বচনে কহিল, “দেব! বৈশম্পায়ন বাটী আসিলে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া, আমি অবিলম্বে গন্ধর্ব্বনগরে গমন করিতেছি; তুমি পত্রলেখা ও কেয়ূরকের সহিত অগ্রসর হও,” আপনি এই আদেশ দিয়া আমাকে বিদায় করিলেন। আমি আসিবার সময়, বৈশম্পায়ন বাটী যান নাই, অচ্ছোদসরোবরের তীরে অবস্থিতি করিতেছেন, ইহা কাহারও মুখে শুনি নাই। তাঁহার সহিত আমার সাক্ষাৎও হয় নাই। আমি অচ্ছোদসরোবর পর্য্যন্ত যাই নাই। পথিমধ্যে পত্রলেখা ও কেয়ূরক কহিলেন, মেঘনাদ! বর্ষাকাল উপস্থিত! তুমি এই স্থান হইতেই প্রস্থান কর। এই ভীষণকালে একাকী এখানে কদাচ থাকিও না। এই কথা বলিয়া আমাকে বিদায় দিলেন।
রাজকুমার মেঘনাদকেও সঙ্গে করিয়া লইলেন। কিছু দিন পরে অচ্ছোদসরোবরের তীরে উপস্থিত হইলেন। পূর্ব্বে যে স্থানে নির্ম্মল জল, বিকসিত কুসুম, মনোহর তীর ও বিচিত্র লতাকুঞ্জ দেখিয়া প্রীত ও প্রফুল্লচিত্ত হইয়াছিলেন, এক্ষণে বিষণ্ণ চিত্তে তথায় উপস্থিত হইয়া প্রিয়সখার অন্বেষণ করিতে লাগিলেন। সমভিব্যাহারী লোকদিগকে সতর্ক হইয়া অনুসন্ধান করিতে কহিলেন। আপনিও তরুগহন, তীরভূমি ও লতামণ্ডপ তন্ন তন্ন করিয়া দেখিতে লাগিলেন। যখন তাঁহার অবস্থানের কোন চিহ্ন পাইলেন না, তখন ভগ্নোৎসাহ চিত্তে চিন্তা করিলেন, পত্রলেখার মুখে আমার আগমন সংবাদ শুনিয়া বন্ধু বুঝি এখান হইতে