শরীর আমার তেজঃস্পর্শে অবিনাশি ও অবিকৃত হইয়া মদীয় লোকে আছে। চন্দ্রাপীড়ের এই শরীরও মত্তেজোময় অবিনাশি। বিশেষতঃ কাদম্বরীর করস্পর্শ হওয়াতে ইহার আর ক্ষয় নাই। শাপদোষে এই দেহ জীবনশূন্য হইয়াছে, যোগিশরীরের ন্যায় পুনর্ব্বার জীবাত্মা সংযুক্ত হইবে। তোমাদের প্রত্যয়ের নিমিত্ত ইহা এই স্থানেই থাকিল, অগ্নিসংস্কার বা পরিত্যাগ করিও না। যত দিন পুনর্জীবিত না হয়, প্রযত্নে রক্ষণাবেক্ষণ করিও।”
আকাশবাণী শ্রবণান্তর সকলে বিস্মিত ও চমৎকৃত হইয়া চিত্রিতের ন্যায় নিমেষশূন্য লোচনে গগনে দৃষ্টিপাত করিয়া রহিল। চন্দ্রাপীড়ের শরীরোদ্ভূতজ্যোতিঃস্পর্শে পত্রলেখার মূর্চ্ছাপনয় ও চৈতন্যোদয় হইল। তখন সে উন্মত্তের ন্যায় সহসা গাত্রোত্থান করিয়া, ইন্দ্রায়ুধের নিকটে অতি বেগে গমন করিয়া কহিল, রাজকুমার প্রস্থান করিলেন, তোমার আর একাকী থাকা উচিত নয়। এই বলিয়া রক্ষকের হস্ত হইতে বলপূর্ব্বক বল্গা গ্রহণ করিয়া তাহার সহিত অচ্ছোদসরোবরে ঝম্প প্রদান করিল। ক্ষণকালের মধ্যে জলে নিমগ্ন হইয়া গেল। অনন্তর জটাধারী এক তাপসকুমার সহসা জলমধ্য হইতে সমুত্থিত হইলেন। তাঁহার মস্তকে শৈবাল লাগাতে ও গাত্র হইতে বিন্দু বিন্দু বারি পতিত হওয়াতে প্রথমে বোধ হইল যেন, জলমানুষ। মহাশ্বেতা সেই তাপসকুমারকে পরিচিতপূর্ব্ব ও দৃষ্টপূর্ব্ব বোধ করিয়া এক দৃষ্টিতে দেখিতে লাগিলেন। তিনিও নিকটে আসিয়া মৃদু স্বরে কহিলেন, গন্ধর্ব্বরাজপুত্ত্রি! আমাকে চিনিতে পার? মহাশ্বেতা শোক, বিস্ময় ও আনন্দের মধ্যবর্ত্তিনী হইয়া, সসম্ভ্রমে গাত্রোত্থান করিয়া সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করিলেন। গদ্গদ বচনে কহিলেন, ভগবন্ কপিঞ্জল! এই হতভাগিনীকে সেইরূপ বিষম সঙ্কটে রাখিয়া আপনি কোথায় গিয়াছিলেন? এত কাল কোথায় ছিলেন? আপনার প্রিয় সখাকে কোথায় রাখিয়া আসিতেছেন?
মহাশ্বেতা এই কথা জিজ্ঞাসা করিলে কাদম্বরী, কাদম্বরীর পরি-