লোচনে গদ্গদ বচনে কহিলেন, হাঁ, তাহারা অযুক্ত কথা কহে নাই। যে অদ্ভুত, অলৌকিক ব্যাপার উপস্থিত, ইহা স্বচক্ষে দেখিলেও প্রত্যয় হয় না। না দেখিয়া মহারাজের নিকটে গিয়া তাহারা কি বলিবে? কি বলিয়াই বা মহিষীকে বুঝাইবে? যাঁহাকে ক্ষণমাত্র অবলোকন করিলে আর বিস্মৃত হইতে পারা যায় না, ভৃত্যেরা তাঁহার চিরকালীন স্নেহ কি রূপে বিস্মৃত হইবে? শীঘ্র তাহাদিগকে আনয়ন কর। যুবরাজের অবিকৃত শরীরশোভা দেখিয়া তাহাদিগের আগমনশ্রম সফল হউক। অনন্তর দূতগণ আশ্রমে প্রবেশিয়া কাদম্বরীকে প্রণাম করিল। সজল নয়নে রাজকুমারের অঙ্গসৌষ্ঠব দেখিতে লাগিল। কাদম্বরী কহিলেন, তোমরা স্নেহসুলভ শোকাবেগ পরিত্যাগ কর। নিরবধি দুঃখকেই দুঃখ বলিয়া গণনা করা উচিত; কিন্তু ইহা সেরূপ নয়, ইহাতে পরিণামে মঙ্গলের প্রত্যাশা আছে। এই বিস্ময়কর ব্যাপারে শোকের অবসর নাই। এরূপ ঘটনা কেহ কখন দেখে নাই, শ্রবণও করে নাই। প্রাণবায়ু প্রয়াণ করিলে শরীর অবিকৃত থাকে ইহা আশ্চর্য্যের বিষয়। এক্ষণে তোমরা প্রতিগমন কর। এবং উৎকণ্ঠিতচেতা মহারাজকে এইমাত্র বলিও যে, আমরা অচ্ছোদসরোবরে যুবরাজকে দেখিয়া আসিতেছি। উপস্থিত ঘটনা প্রকাশ করিবার প্রয়োজন নাই। প্রকাশ করিলে মহারাজের কখন বিশ্বাস হইবে না, প্রত্যুত শোকে তাঁহার প্রাণ বিগমের সম্ভাবনা।
দূতেরা কহিল, দেবি! হয় আমরা না যাই, অথবা গিয়া না বলি, ইহা হইলে এই ব্যাপার অপ্রকাশিত থাকিতে পারে; কিন্তু দুই অসম্ভব। বৈশম্পায়নের অন্বেষণ করিতে আসিয়া যুবরাজের বিলম্ব হওয়াতে মহারাজ অতিশয় ব্যাকুল হইয়া আমাদিগকে পাঠাইয়াছেন। আমরা না যাইলে বিষম অনর্থ ঘটিবার সম্ভাবনা। গিয়া তনয়বার্ত্তাশ্রবণলালস মহারাজ, মহিষী ও শুকনাসের উৎকণ্ঠিত বদন অবলোকন করিলে নির্ব্বিকার চিত্তে স্থির হইয়া থাকিতে পারিব, ইহাও অসম্ভব। কাদম্বরী কহিলেন, হাঁ অলীক