যুবরাজকে দেখিয়াছি। অন্যান্য সংবাদ এই ত্বরিতক নিবেদন করিতেছে, শ্রবণ করুন।
মহিষী তাহাদিগের বিষণ্ণ আকার দেখিয়াই অমঙ্গল সম্ভাবনা করিতেছিলেন, তাহাতে আবার, ত্বরিতক আর আর সংবাদ নিবেদন করিতেছে, এই কথা শুনিয়া বিষণ্ণ হইয়া ভূতলে পড়িলেন। শিরে করাঘাত পূর্ব্বক হা হতাস্মি বলিয়া বিলাপ করিয়া কহিলেন, ত্বরিতক আর কি বলিবে? তোমাদিগের বিষণ্ণ বদন, কাতর বচন ও হর্ষশূন্য আগমনেই সকল ব্যক্ত হইয়াছে। হা বৎস! জগদেকচন্দ্র! চন্দ্রানন! তোমার কি ঘটিয়াছে? কেন তুমি বাটী আসিলে না? শীঘ্র আসিব বলিয়া গেলে কই তোমার সে কথা কোথায় রহিল? কখন আমার নিকট মিথ্যা বল নাই এবারে কেন প্রতারণা করিলে? তোমার যাত্রার সময় আমার অন্তঃকরণে শঙ্কা হইয়াছিল, বুঝি সেই শঙ্কা সত্য হইল। তোমার সেই প্রফুল্ল মুখ আর দেখিতে পাইব না! তুমি কি এক বারে পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছ? বস এক বার আসিয়া আমার অঙ্কের ভূষণ হও এবং মধুর স্বরে মা বলিয়া ডাকিয়া কর্ণকুহরে অমৃত বর্ষণ কর। এই হতভাগিনীকে মা বলিয়া সম্বোধন করে, এমন আর নাই। তুমি কখন আমার কথা উল্লঙ্ঘন কর নাই, এক্ষণে আমার কথা শুনিতেছ না কেন? কি জন্য উত্তর দিতেছ না? তুমি এমন বিবেচনা করিও না যে, বিলাসবতী চন্দ্রাপীড়ের অস্তগমনেও জীবন ধারণ করিবে। ত্বরিতকের মুখে তোমার সংবাদ শুনিতে ভয় হইতেছে। উহা যেন শুনিতে না হয়। এই বলিয়া মহিষী মোহ প্রাপ্ত হইলেন।
বিলাসবতী দেবমন্দিরে মোহ প্রাপ্ত হইয়া পড়িয়া আছেন, শুনিয়া মহারাজ অতিশয় চঞ্চল ও ব্যাকুল হইলেন। শুকনাসের সহিত তথায় উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, কেহ কদলীদল দ্বারা বীজন, কেহ জলসেচন, কেহ বা শীতল পাণিতল দ্বারা মহিষীর গাত্রস্পর্শ করিতেছে। ক্রমে মহিষীর চৈতন্যোদয় হইল এবং মুক্ত কণ্ঠে হা হতাস্মি বলিয়া রোদন করিতে লাগিলেন। রাজা প্রবোধবাক্যে