পাতা:কাদম্বরী.djvu/১৩৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৩০
কাদম্বরী।

কহিলেন, দেবি! যদি চন্দ্রাপীড়ের অত্যহিত ঘটিয়া থাকে, রোদন দ্বারা তাহার কি প্রতিকার হইবে? বিশেষতঃ সমুদায় বৃত্তান্ত শ্রবণ করা হয় নাই। অগ্রে বিশেষ রূপে সমুদায় শ্রবণ করা যাউক, পরে যাহা কর্ত্তব্য, করা যাইবেক। এই বলিয়া ত্বরিতককে ডাকাইলেন। জিজ্ঞাসিলেন, ত্বরিতক! চন্দ্রাপীড় কোথায় কিরূপ আছেন? বাটী আসিবার নিমিত্ত পত্র লিখিয়াছিলাম, আসিলেন না কেন? কি উত্তর দিয়াছেন? ত্বরিতক, যুবরাজের বাটী হইতে গমন অবধি হৃদয়বিদারণ পর্য্যন্ত সমুদায় বৃত্তান্ত বর্ণন করিল। রাজা আর শুনিতে না পারিয়া আর্ত্তস্বরে বারণ করিয়া কহিলেন, ক্ষান্ত হও — ক্ষান্ত হও! আর বলিতে হইবে না। যাহা শুনিবার শুনিলাম। হা বৎস! হৃদয়বিদারণের ক্লেশ তুমিই অনুভব করিলে। বন্ধুর প্রতি যেরূপ প্রণয় প্রকাশ করিতে হয়, তাহার দৃষ্টান্ত পথে দণ্ডায়মান হইয়া পৃথিবীর প্রশংসাপাত্র হইলে। স্নেহ প্রকাশের নবীন পথ উদ্ভাবিত করিলে। তুমিই সার্থকজন্মা মহাপুরুষ। আমরা পাপিষ্ঠ, নির্দ্দয়, নরাধম। যেন কৌতুকাবহ উপন্যাসের ন্যায় এই দুর্ব্বিষহ দারুণ বৃত্তান্ত অবলীলাক্রমে শুনিলাম, কই কিছুই হইল না। অরে ভীরু প্রাণ! ব্যাকুল হইতেছিস্ কেন? যদি স্বয়ং বহির্গত না হইস্ এবার বলপূর্ব্বক তোকে বহির্গত করিব। দেবি! প্রস্তুত হও, এ সময় কালক্ষেপের সময় নয়। চন্দ্রাপীড় একাকী যাইতেছেন, শীঘ্র তাঁহার সঙ্গী হইতে হইবে। আর বিলম্ব করা বিধেয় নয়। আঃ হতভাগ্য শুকনাস! এখনও বিলম্ব করিতেছ? প্রাণপরিত্যাগের এরূপ সময় আর কবে পাইবে? এই বেলা চিতা প্রস্তুত কর। প্রজ্জ্বলিত অনলশিখা আলিঙ্গন করিয়া তাপিত অঙ্গ শীতল করা যাউক। ত্বরিতক সভয়ে বিনীত বচনে নিবেদন করিল, মহারাজ! আপনি যেরূপ সম্ভাবনা ও শঙ্কা করিতেছেন সেরূপ নয়। যুবরাজের শরীর প্রাণবিযুক্ত হইয়াছে; কিন্তু অনির্ব্বচনীয় ঘটনাবশতঃ অবিকৃত আছে। এই বলিয়া আকাশবাণীর সমুদায় বিবরণ, ইন্দ্রায়ুধের কপিঞ্জলরূপ ধারণ ও শাপবৃত্তান্ত অবিকল বর্ণন