দিন চন্দ্রাপীড়ের মুখচন্দ্র দর্শন করিয়া সুখে কালক্ষেপ করিতে লাগিলেন।
মহর্ষি জাবালি এই রূপে কথা সমাপ্ত করিয়া হাস্য পূর্ব্বক মুনিকুমারদিগকে কহিলেন, দেখ! আমি অন্যমনস্ক হইয়া তোমাদিগের অভিপ্রেত উপাখ্যান অপেক্ষাও অধিক বলিলাম। যাহা হউক, যে মুনিতনয় মদনবাণে আহত হইয়া আত্মকৃত অবিনয় জন্য মর্ত্ত্যলোকে শুকনাসের ঔরসে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন এবং তদনন্তর মহাশ্বেতার শাপে তির্য্যগ্জাতিতে পতিত হন, তিনি এই। এই কথা বলিয়া অঙ্গুলি দ্বারা আমাকে নির্দ্দেশ করিয়া দেখাইয়া দিলেন।
তাঁহার কথাবসানে জন্মান্তরীণ সমুদায় কর্ম্ম আমার স্মৃতিপথারূঢ় এবং পূর্ব্বজন্মশিক্ষিত সমুদায় বিদ্যা আমার জিহ্বাগ্রবর্ত্তিনী হইল। তদবধি মনুষ্যের ন্যায় সুস্পষ্ট কথা কহিতে লাগিলাম। বোধ হইল যেন, এত দিন নিদ্রিত ছিলাম, এক্ষণে জাগরিত হইলাম। কেবল মনুষ্যদেহ হইল না নতুবা চন্দ্রাপীড়ের প্রতি সেইরূপ স্নেহ, মহাশ্বেতার প্রতি সেইরূপ অনুরাগ এবং তাঁহার প্রাপ্তিবিষয়েও সেইরূপ ঔৎসুক্য জন্মিল। পক্ষোদ্ভেদ না হওয়াতে কেবল কায়িক চেষ্টা হইল না। পূর্ব্ব পূর্ব্ব জন্মের সমুদায় বৃত্তান্ত স্মৃতিপথারূঢ় হওয়াতে পিতা, মাতা, মহারাজ তারাপীড়, মহিষী বিলাসবতী, বয়স্য চন্দ্রাপীড় এবং প্রথম সুহৃদ্ কপিঞ্জল সকলেই এককালে আমার সমুৎসুক চিত্তে পদ প্রাপ্ত হইলেন। তখন আমার অন্তঃকরণ কিরূপ হইল কিছু বলিতে পারি না। অনেক ক্ষণ চিন্তা করিলাম, মনে কত ভাবোদয় হইতে লাগিল। মহর্ষি আমার অবিনয়ের পরিচয় দেওয়াতে তাঁহার নিকট লজ্জিত হইলাম। লজ্জায় অধোবদন হইয়া বিনয়বচনে জিজ্ঞাসিলাম, ভগবন্! আপনার অনুকম্পায় পূর্ব্বজন্মবৃত্তান্ত আমার স্মৃতিপথবর্ত্তী হইয়াছে ও সমুদায় সুহৃদ্গণকে মনে পড়িয়াছে। কিন্তু উহা স্মরণ না হওয়াই ভাল ছিল। এক্ষণে বিরহবেদনায় প্রাণ যায়।