সে সকল একবারে বিস্মৃত হইলাম। আমার পর কৃতঘ্ন আর নাই; আমার মত নৃশংস ও দুরাচার এই ভূমণ্ডলে কাহাকেও দেখিতে পাই না। কি আশ্চর্য্য! সেরূপ অবস্থাতে আমার জল পান করিবার অভিলাষ হইল। দূর হইতে সারস ও কলহংসের অনতিপরিস্ফুট কলরব শুনিয়া অনুমান করিলাম সরোবর দূরে আছে। কি রূপে সরোবরে যাইব, কি রূপে জলপান করিয়া প্রাণ বাঁচাইব, অনবরত এইরূপ ভাবিতে লাগিলাম।
এমন সময়ে মধ্যাহ্নকাল উপস্থিত। গগনমণ্ডলের মধ্যভাগ হইতে দিনমণি অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় প্রচণ্ড অংশুসমূহ নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন। রৌদ্রের উত্তাপে পথ উত্তপ্ত হইল। পথে পাদক্ষেপ করা কাহার সাধ্য? সেই উত্তপ্ত বালুকায় আমার পা দগ্ধ হইতে লাগিল। কোন প্রকারে মরিবার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু সে সময়ে এরূপ কষ্ট ও যাতনা উপস্থিত হইল যে বিধাতার নিকট বারংবার মরণের প্রার্থনা করিতে হইল। চতুর্দ্দিক অন্ধকার দেখিতে লাগিলাম। পিপাসায় কণ্ঠ শুষ্ক ও অঙ্গ অবশ হইল।
সেই স্থানের অনতিদূরে জাবালি নামে পরম পবিত্র মহাতপা মহর্ষি বাস করিতেন। তাঁহার পুত্ত্র হারীত কতিপয় বয়স্য সমভিব্যাহারে সেই দিক্ দিয়া সরোবরে স্নান করিতে যাইতেছিলেন। তিনি এরূপ তেজস্বী যে, হঠাৎ দেখিলে সাক্ষাৎ সূর্য্যদেবের ন্যায় বোধ হয়। তাঁহার মস্তকে জটাভার, ললাটে ভস্মত্রিপুণ্ড্রক, কর্ণে স্ফটিকমালা, বামকরে কমণ্ডলু, দক্ষিণ হস্তে আষাঢ়দণ্ড, স্কন্ধে কৃষ্ণাজিন ও গলদেশে যজ্ঞোপবীত। তাঁহার প্রশান্ত আকৃতি দেখিবামাত্র বোধ হইল যে, পরমকারুণিক ভূতভাবন ভগবান্ ভবানীপতি আমার রক্ষার নিমিত্ত ভূতলে অবতীর্ণ হইলেন। সাধুদিগের চিত্ত স্বভাবতই দয়ার্দ্র। আমার সেইরূপ দুর্দ্দশা ও যন্ত্রণা দেখিয়া তাঁহার অন্তঃকরণে করুণোদয় হইল এবং আমাকে নির্দ্দেশ করিয়া বয়স্যদিগকে