পাতা:কাদম্বরী.djvu/১৪৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪০
কাদম্বরী।

ছিল না, সুতরাং কিঞ্চিৎ দূর যাইয়াই অতিশয় শ্রান্তি বোধ ও পিপাসায় কণ্ঠশোষ হইল। এক সরোবরের সমীপবর্ত্তী জম্বুনিকুঞ্জে উপবেশন করিয়া শ্রান্তি দূর করিলাম। সুস্বাদু ফল ভক্ষণ ও সুশীতল জল পান করিয়া ক্ষুৎপিপাসা শান্তি হইলে নিদ্রাকর্ষণ হইতে লাগিল। পক্ষপুটের অন্তরালে চঞ্চুপুট নিবেশিত করিয়া সুখে নিদ্রা গেলাম। জাগরিত হইয়া দেখি জালে বদ্ধ হইয়াছি। সম্মুখে এক বিকটাকার ব্যাধ দণ্ডায়মান। তাহার ভীষণ মূর্ত্তি দেখিয়া কলেবর কম্পিত হইল এবং জীবনে নিরাশ হইয়া ব্যাধকে সম্বোধন করিয়া কহিলাম, ভদ্র! তুমি কে, কি নিমিত্ত আমাকে জালবদ্ধ করিলে? যদি আমিষলোভে বদ্ধ করিয়া থাক নিদ্রাবস্থায় কেন প্রাণ বিনাশ কর নাই? যদি কৌতুকের নিমিত্ত ধরিয়া থাক, কৌতুক নিবৃত্ত হইল এক্ষণে জালমোচন করিয়া দেও। নিরপরাধে কেন আর যন্ত্রণা দিতেছ? আমার চিত্ত প্রিয়জন দর্শনে অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত, আর বিলম্ব সহেনা। তুমিও প্রাণী বট, বল্লভ জনের অদর্শনে মন কিরূপ চঞ্চল হয়, জানিতে পার।

কিরাত কহিল, আমি চণ্ডাল বটি, কিন্তু আমিষলোভে তোমাকে জালবদ্ধ করি নাই। আমাদিগের স্বামী পক্কণদেশের অধিপতি। তাঁহার কন্যা শুনিয়াছিলেন, জাবালি মুনির আশ্রমে এক আশ্চর্য্য শুকপক্ষী আছে। সে মনুষ্যের মত কথা কহিতে পারে। শুনিয়া অধিক কৌতুকাক্রান্ত হইয়াছিলেন এবং অনেক ব্যক্তিকে ধরিবার আদেশ দিয়াছিলেন। অনেক দিন অনুসন্ধানে ছিলাম। আজি সুযোগক্রমে জালবদ্ধ করিয়াছি। এক্ষণে লইয়া গিয়া তাঁহাকে প্রদান করিব। তিনিই তোমার বন্ধু অথবা মোচনের প্রভু। কিরাতের কথায় সাতিশয় বিষণ্ণ হইলাম। ভাবিলাম, আমি কি হতভাগ্য! প্রথমে ছিলাম দিব্যলোকবাসী ঋষি; তাহার পর সামান্য মানব হইলাম; অবশেষে শুকজাতিতে পতিত হইয়া জালবদ্ধ হইলাম ও চণ্ডালের গৃহে যাইতে হইল। তথায় চণ্ডাল-বাল-