এই সকল দেখিতেছিলাম, এমন সময়ে মুনিকুমার হারীত আমাকে সেই রক্তাশোকতরুর ছায়ায় বসাইয়া পিতার চরণারবিন্দ বন্দনা পূর্ব্বক স্বতন্ত্র এক আসনে উপবিষ্ট হইলেন। অন্যান্য মুনিকুমারেরা মদ্দর্শনে সাতিশয় কৌতুকাবিষ্ট ও ব্যগ্র হইয়া হারীতকে জিজ্ঞাসা করিলেন, সখে! এই শুকশিশুটী কোথায় পাইলে? হারীত কহিলেন, স্নান করিতে যাইবার সময় পথিমধ্যে দেখিলাম, এই শুকশিশু আপন কুলায় হইতে পতিত হইয়া ভূতলে বিলুণ্ঠিত হইতেছে। ইহাকে তাদৃশ বিষম দুরবস্থাপন্ন দেখিয়া আমার অন্তঃকরণে করুণোদয় হইল। কিন্তু যে বৃক্ষ হইতে পতিত হইয়াছিল, তাহাতে আরোহণ করা আমাদিগের অসাধ্য বোধ হওয়াতে সঙ্গে করিয়া লইয়া আসিয়াছি। এই স্থানে থাকুক, সকলকে যত্নপূর্ব্বক ইহার রক্ষণাবেক্ষণ করিতে হইবে।
হারীতের এই কথা শুনিয়া ভগবান্ জাবালি কুতূহলাক্রান্ত হইয়া আমার প্রতি চক্ষু নিক্ষেপ করিলেন। তাঁহার প্রশান্ত দৃষ্টিপাত মাত্রেই আমি আপনাকে চরিতার্থ ও পবিত্র জ্ঞান করিলাম। তিনি পরিচিতের ন্যায় আমাকে বারংবার নেত্রগোচর করিয়া কহিলেন, এই পক্ষী আপন দুষ্কর্ম্মের ফল ভোগ করিতেছে। সেই মহর্ষি কালত্রয়দর্শী; তপস্যার প্রভাবে ভূত ভবিষ্যৎ, বর্ত্তমানের ন্যায় দেখেন এবং জ্ঞানচক্ষু দ্বারা সমস্ত জগৎ করতলস্থিত বস্তুর ন্যায় দেখিতে পান; সকলে তাঁহার প্রভাব জানিতেন; তাঁহার কথায় কাহারও অবিশ্বাস হইল না। মুনিকুমারেরা ব্যগ্র হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, এ কি দুষ্কর্ম্ম করিয়াছে, কি রূপেই বা তাহার ফল ভোগ করিতেছে? জন্মান্তরে এ কোন্ জাতি ছিল, কেনই বা পক্ষী হইয়া জন্মগ্রহণ করিল। অনুগ্রহ পূর্ব্বক ইহার দুষ্কর্ম্মবৃত্তান্ত বর্ণন করিয়া আমাদিগের কৌতুকাক্রান্ত চিত্তকে পরিতৃপ্ত করুন।
মহর্ষি কহিলেন, সে কথা বিস্ময়জনক ও কৌতুকাবহ বটে, কিন্তু অতি দীর্ঘ; অল্প ক্ষণের মধ্যে সমাপ্ত হইবেক না। এক্ষণে দিবাবসান হইতেছে, আমাকে স্নান করিতে হইবেক। তোমাদিগেরও