উদিত হইলে গগনমণ্ডলের যেরূপ শোভা হয়, কত দিনে দেবী পুত্ত্র ক্রোড়ে করিয়া সেইরূপ শোভিত হইবেন; নিরপত্যতা এক্ষণে অতিশয় ক্লেশ দিতেছে। সংসার অরণ্য ও জগৎ শূন্য দেখিতেছি; রাজ্য ও ঐশ্বর্য্য নিষ্ফল বোধ হইতেছে। কিন্তু অপ্রতিবিধেয় বিষয়ে শোক ও দুঃখ করা বৃথা বলিয়াই ধৈর্য্যাবলম্বনপূর্ব্বক যথাকথঞ্চিৎ সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করিতেছি। এইরূপ নানা প্রবোধবাক্যে আশ্বাস দিয়া স্বহস্তে মহিষীর নেত্রজল মোচন করিয়া দিলেন। অনেক ক্ষণ অন্তঃপুরে থাকিয়া পরে বহির্গত হইলেন।
রাজা অন্তঃপুর হইতে বহির্গত হইলে বিলাসবতী প্রবোধবাক্যে কিঞ্চিৎ শান্ত হইয়া স্নান ভোজনাদি সমাপন করিলেন। যে সকল আভরণ ফেলিয়া দিয়াছিলেন তাহা পুনর্ব্বার অঙ্গে ধারণ করিলেন। তদবধি দেবতার আরাধনা, ব্রাহ্মণের সেবা ও গুরু জনের পরিচর্য্যায় অতিশয় অনুরক্ত হইলেন। দৈবকর্ম্মে অনুরক্ত হইয়া চণ্ডিকার গৃহে প্রতিদিন ধূপ গুগ্গুল প্রভৃতি সুগন্ধ দ্রব্যের গন্ধ বিস্তার করেন। দিবসবিশেষে তথায় কুশাসনে শয়ন করিয়া থাকেন। প্রতিদিন প্রাতঃকালে ব্রাহ্মণদিগকে স্বর্ণপাত্র দান করেন। কৃষ্ণপক্ষীয় চতুর্দ্দশী রজনীতে চতুষ্পথে দেবতাদিগকে বলি উপহার দেন। অশ্বত্থ প্রভৃতি বনস্পতিদিগকে প্রদক্ষিণ করেন। ষোড়শোপচারে ষষ্ঠীদেবীর পূজা দেন। ফলতঃ যে যেরূপ ব্রতের অনুষ্ঠান করিতে কহে, অতিশয় ক্লেশসাধ্য হইলেও অপত্যতৃষ্ণায় উহার অনুষ্ঠান করেন, কিছুতেই পরাঙ্মুখ হয়েন না। গণক অথবা সিদ্ধপুরুষ দেখিলে সমাদর পূর্ব্বক সন্তানের গণনা করান। রাত্রিতে যে সকল স্বপ্ন দেখেন, প্রভাতে পুরন্ধ্রীদিগকে তাহার ফলাফল জিজ্ঞাসা করেন।
এই রূপে কিছুদিন অতীত হইলে, একদা রাত্রিশেষে রাজা স্বপ্নে দেখিলেন, বিলাসবতী সৌধশিখরে শয়ন করিয়া আছেন, তাঁহার মুখমণ্ডলে পূর্ণচন্দ্র প্রবেশ করিতেছে। স্বপ্নদর্শনানন্তর