কোন স্থানে নর্ত্তকীরা নৃত্য, গায়কেরা সঙ্গীত ও বন্দিগণ স্তুতিপাঠ করিতেছে। জলচর পক্ষী সকল কেলি করিয়া বেড়াইতেছে। বালকবালিকাগণ ময়ূর ও ময়ূরীর সহিত ক্রীড়া করিতেছে। হরিণ ও হরিণীগণ মানুষসমাগমে ত্রস্ত হইয়া ভয়চকিতলোচনে বাটীর চতুর্দ্দিকে দৌড়িতেছে।
অনন্তর ছয় প্রকোষ্ঠ অতিক্রম করিয়া সপ্তম প্রকোষ্ঠের অভ্যন্তরে প্রবেশিয়া মহারাজের আবাসগৃহের নিকটবর্ত্তী হইলেন। অন্তঃপুরপুরন্ধ্রীরা রাজকুমারকে দেখিবামাত্র আনন্দিত মনে মঙ্গলাচরণ করিতে লাগিল। মহারাজ পরিষ্কৃত শয্যামণ্ডিত পর্য্যঙ্কে নিষণ্ণ আছেন, শরীররক্ষাধিকৃত অস্ত্রধারী দ্বারপালেরা সতর্কতা পূর্ব্বক প্রহরীর কার্য্য করিতেছে; এমন সময়ে চন্দ্রাপীড় পিতার নিকটে উপস্থিত হইলেন। “মহারাজ! অবলোকন করুন” দ্বারপাল এই কথা কহিলে, রাজা দৃষ্টিপাত পূর্ব্বক বৈশম্পায়ন সমভিব্যাহারী চন্দ্রাপীড়কে সমাগত দেখিয়া সাতিশয় আনন্দিত হইলেন। করপ্রসারণ পূর্ব্বক প্রণত পুত্ত্রকে আলিঙ্গন করিলেন। তাঁহার স্নেহবিকসিত লোচন হইতে আনন্দাশ্রু নির্গত হইতে লাগিল। বৈশম্পায়নকেও সমাদরে আলিঙ্গন করিয়া আসনে উপবেশন করিতে কহিলেন। ক্ষণকাল তথায় বসিয়া রাজকুমার জননীর নিকট গমন করিলেন। পুত্ত্রবৎসলা বিলাসবতী স্নিগ্ধ ও প্রীতিপ্রফুল্ল নয়নে পুত্ত্রকে পুনঃ পুনঃ নিরীক্ষণ করিয়া তাঁহার মস্তক আঘ্রাণ ও হস্ত দ্বারা গাত্রস্পর্শ পূর্ব্বক আপন উৎসঙ্গ দেশে বসাইলেন ও স্নেহসংবলিত মধুর বচনে বলিলেন, বৎস! তোমাকে নানা বিদ্যায় বিভূষিত দেখিয়া নয়ন ও মন পরিতৃপ্ত হইল। এক্ষণে বধূসহচারী দেখিলে সকল মনোরথ পূর্ণ হয়। এই কথা কহিয়া লজ্জাবনত পুত্ত্রের কপোলদেশে চুম্বন করিতে লাগিলেন।
রাজকুমার এই রূপে সমস্ত অন্তঃপুরবাসিনীদিগকে দর্শন দিয়া আহ্লাদিত করিলেন। পরিশেষে শুকনাসের ভবনে উপস্থিত