পাতা:কাদম্বরী.djvu/৫৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৪
কাদম্বরী।

আছেন। বলিলেন, অক্ষমালা লইতে আসিয়াছি। মুনিকুমার, এই শব্দ শ্রবণমাত্র অতিমাত্র ব্যস্ত হইয়া কহিলাম, শীঘ্র সঙ্গে করিয়া লইয়া আইস। যেরূপ রূপের সহায় যৌবন, যৌবনের সহায় মকরকেতন, মকরকেতনের সহায় বসন্তকাল, বসন্তকালের সহায় মলয়পবন, সেইরূপ তিনি পুণ্ডরীকের সখা, নাম কপিঞ্জল, দেখিবামাত্র চিনিলাম। তাঁহার বিষণ্ণ আকার দেখিয়া বোধ হইল যেন, কোন অভিপ্রায়ে আমাকে কিছু বলিতে আসিয়াছেন। আমি উঠিয়া প্রণাম করিয়া সমাদরে আসন প্রদান করিলাম। আসনে উপবেশন করিলে চরণ ধৌত করিয়া দিলাম। অনন্তর কিছু বলিতে ইচ্ছা করিয়া আমার নিকটে উপবিষ্ট তরলিকার প্রতি দৃষ্টিপাত করাতে আমি তাঁহার দৃষ্টিতেই অভিপ্রায় বুঝিতে পারিয়া বিনয়বাক্যে কহিলাম, ভগবন্! আমা হইতে ইহাকে ভিন্ন ভাবিবেন না। যাহা আদেশ করিতে অভিলাষ হয় অশঙ্কিত ও অসঙ্কুচিত চিত্তে আজ্ঞা করুন।

কপিঞ্জল কহিলেন, রাজপুত্ত্রি! কি কহিব, লজ্জায় বাক্যস্ফূর্ত্তি হইতেছে না। কন্দমূলফলাশী বনবাসীর মনে অনঙ্গবিলাস সঞ্চারিত হইবে ইহা স্বপ্নের অগোচর। শান্তস্বভাব তাপসকে প্রণয়পরবশ করিয়া বিধি কি বিড়ম্বনা করিলেন! দগ্ধ মন্মথ অনায়াসেই লোকদিগকে উপহাসাস্পদ ও অবজ্ঞাস্পদ করিতে পারে। অন্তঃকরণে একবার অনঙ্গবিলাস সঞ্চারিত হইলে আর ভদ্রতা নাই। তখন প্রগাঢ় ধীশক্তিসম্পন্ন লোকেরাও নিতান্ত অসার ও অপদার্থ হইয়া যান। তখন আর লজ্জা, ধৈর্য্য, বিনয়, গাম্ভীর্য্য কিছুই থাকে না। বন্ধু যে পথে পদার্পণ করিতে উদ্যত হইয়াছেন, জানি না, উহা কি বল্কলধারণের উপযুক্ত, কি জটাধারণের সমুচিত, কি তপস্যার অনুরূপ, কি ধর্ম্মের অঙ্গ, কি অপবর্গ লাভের উপায়! কি দৈবদুর্ব্বিপাক উপস্থিত! না বলিলে চলে না, উপায়ান্তর ও শরণান্তরও দেখি না, কি করি বলিতে হইল। শাস্ত্রকারেরা লিখিয়াছেন, স্বীয় প্রাণবিনাশেও যদি সুহৃদের প্রাণরক্ষা হয়