গহনের অভ্যন্তরবর্ত্তী শিলাতলে বসিয়া বাম করে বাম গণ্ড সংস্থাপন পূর্ব্বক চিন্তা করিতেছেন। দুই চক্ষু মুদ্রিত, নেত্রজলে কপোলযুগল ভাসিতেছে। ঘন ঘন নিশ্বাস বহিতেছে। শরীর স্পন্দরহিত, কান্তিশূন্য ও পাণ্ডুবর্ণ। হঠাৎ দেখিলে চিত্রিতের ন্যায় বোধ হয়; এরূপ জ্ঞানশূন্য যে, কল্পপাদপের কুসুমমঞ্জরীর অবশিষ্টরেণুগন্ধলোভে ভ্রমর ঝঙ্কার পূর্ব্বক বারংবার কর্ণে বসিতেছে এবং লতা হইতে কুসুম ও কুসুমরেণু গাত্রে পড়িতেছে তথাপি সংজ্ঞা নাই, কলেবর এরূপ শীর্ণ যে সহসা চিনিতে পারা যায় না। তদবস্থাপন্ন তাঁহাকে ক্ষণকাল নিরীক্ষণ করিয়া অতিশয় বিষণ্ণ হইলাম। উদ্বিগ্ন চিত্তে চিন্তা করিলাম মকরকেতুর কি প্রভাব! যে ব্যক্তি উহার শরসন্ধানের পথবর্ত্তী হয় নাই সেই ধন্য ও নিরুদ্বেগে সংসারযাত্রা সংবরণ করিয়া থাকে। এক বার উহার বাণপাতের সম্মুখবর্ত্তী হইলে আর কোন জ্ঞান থাকে না। কি আশ্চর্য্য! ক্ষণকালের মধ্যে এরূপ জ্ঞানরাশি ঈদৃশ অবস্থান্তর প্রাপ্ত হইয়াছেন। ইনি শৈশবাবধি ধীর ও শান্তপ্রকৃতি ছিলেন। সকলে আদর্শস্বরূপ জ্ঞান করিয়া ইঁহার স্বভাবের অনুকরণ করিতে চেষ্টা করিত ও গুণের কথা উল্লেখ করিয়া যথেষ্ট প্রশংসা করিত। আজি কি রূপে বিবেকশক্তি ও তপঃপ্রভাবের পরাভব করিয়া এবং গাম্ভীর্য্যের উন্মূলন ও ধৈর্য্যের সমূলচ্ছেদ করিয়া দগ্ধ মন্মথ এই অসামান্য সৎস্বভাবসম্পন্ন মহাত্মাকে ইতর জনের ন্যায় অভিভূত ও উন্মত্ত করিল! শাস্ত্রকারেরা কহেন, নির্দ্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক রূপে যৌবনকাল অতিবাহিত করা অতি কঠিন কর্ম্ম। ইঁহার অবস্থা শাস্ত্রকারদিগের কথাই সপ্রমাণ করিতেছে। এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে নিকটবর্ত্তী হইলাম এবং শিলাতলের এক পার্শ্বে উপবেশন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, সখে! তোমাকে এরূপ দেখিতেছি কেন? বল আজি তোমার কি ঘটিয়াছে?
তিনি অনেক ক্ষণের পর নয়ন উন্মীলন ও দীর্ঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ পূর্ব্বক, সখে! তুমি আদ্যোপান্ত সমুদায় বৃত্তান্ত অবগত