পাতা:কাদম্বরী.djvu/৬২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৮
কাদম্বরী।

যাহার ইন্দ্রিয় আছে, মন আছে, দেখিতে পায়, শুনিতে পায়, হিতাহিত বিবেচনা করিতে পারে, সেই উপদেশের পাত্র। আমার তাহা কিছুই নাই। আমার নিকটে ধৈর্য্য, গাম্ভীর্য্য, বিবেচনা এ সকল কথাও অস্তগত হইয়াছে। এ সময় উপদেশের সময় নয়; যাবৎ জীবিত থাকি এই অচিকিৎসনীয় রোগের প্রতীকারের চেষ্টা পাও। আমার অঙ্গ দগ্ধ ও হৃদয় জর্জ্জরিত হইতেছে। এক্ষণে যাহা কর্ত্তব্য কর, এই বলিয়া নিস্তব্ধ হইলেন।

যখন উপদেশবাক্যের কোন ফল দর্শিল না এবং দেখিলাম তাঁহার হৃদয়ে অনুরাগ এরূপ দৃঢ় রূপে বদ্ধমূল হইয়াছে যে, তাহা উন্মূলিত করা নিতান্ত অসাধ্য, তখন প্রাণরক্ষার নিমিত্ত সরোবরের সরস মৃণাল, শীতল কমলিনীদল ও স্নিগ্ধ শৈবাল তুলিয়া শয্যা করিয়া দিলাম এবং তথায় শয়ন করাইয়া কদলীপত্র দ্বারা বীজন করিতে লাগিলাম। তৎকালে মনে হইল, দুরাত্মা দগ্ধ মদনের কিছুই অসাধ্য নাই। কোথায় বা বনবাসী তপস্বী, কোথায় বা বিলাসরাশি গন্ধর্ব্বকুমারী। ইহাদিগের মনে পরস্পর অনুরাগ সঞ্চার হইবে ইহা স্বপ্নের অগোচর। শুষ্ক তরু মঞ্জরিত হইবে এবং মাধবীলতা তাহাকে অবলম্বন করিয়া উঠিবে ইহা কাহার মনে বিশ্বাস ছিল? চেতনের কথা কি, অচেতন তরু লতা প্রভৃতিও উহার আজ্ঞার অধীন। দেবতারাও উহার শাসন উল্লঙ্ঘন করিতে পারেন না। কি আশ্চর্য্য! দুরাত্মা এই অগাধ গাম্ভীর্য্যসাগরকেও ক্ষণ কালের মধ্যে তৃণের ন্যায় অসার ও অপদার্থ করিয়া ফেলিল। এক্ষণে কি করি, কোন্ দিকে যাই, কি উপায়ে বান্ধবের প্রাণরক্ষা হয়। দেখিতেছি মহাশ্বেতা ভিন্ন আর কোন উপায় নাই। বন্ধু স্বভাবতঃ ধীর, প্রগল্‌ভতা অবলম্বন করিয়া আপনি কদাচ তাহার নিকট যাইতে পারিবেন না। শাস্ত্রকারেরা গর্হিত অকার্য্য দ্বারা সুহৃদের প্রাণরক্ষা কর্ত্তব্য বলিয়া থাকেন; সুতরাং অতি লজ্জাকর ও মানহানির কর্ম্মও আমার কর্ত্তব্যপক্ষে পরিগণিত হইল। ভাবিলাম, যদি বন্ধুকে বলি যে,