পাতা:কাদম্বরী.djvu/৬৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬২
কাদম্বরী।

কিঞ্চিৎ দূর যাইয়া তরলিকাকে কহিলাম, তরলিকে! চন্দ্র যেরূপ আমাকে তাঁহার নিকট লইয়া যাইতেছেন এমনি তাঁহাকে কি আমার নিকটে লইয়া আসিতে পারেন না? তরলিকা হাসিয়া বলিল, ভর্ত্তৃদারিকে! চন্দ্র কিজন্য আপনার বিপক্ষের উপকার করিবেন? পুণ্ডরীক যেরূপ তোমার রূপলাবণ্যে মোহিত হইয়াছেন, চন্দ্রও সেইরূপ তোমার নিরুপম সৌন্দর্য্য দর্শনে মুগ্ধ হইয়া প্রতিবিম্বচ্ছলে তোমার গাত্র স্পর্শ ও কর দ্বারা পুনঃ পুনঃ চরণ ধারণ করিতেছেন। বিরহীর ন্যায় ইঁহার শরীরও পাণ্ডুবর্ণ হইয়াছে। তৎকালোচিত এই সকল পরিহাসবাক্য কহিতে কহিতে সরোবরের নিকটবর্ত্তী হইলাম। কৈলাসপর্ব্বত হইতে প্রবাহিত চন্দ্রকান্তমণির প্রস্রবণে চরণ ধৌত করিতেছিলাম এমন সময়ে সরোবরের পশ্চিম তীরে রোদনধ্বনি শুনিলাম। কিন্তু দূরপ্রযুক্ত সুস্পষ্ট কিছু বুঝা গেল না। আগমনকালে দক্ষিণ চক্ষু স্পন্দ হওয়াতে মনে মনে সাতিশয় শঙ্কা ছিল; এক্ষণে অকস্মাৎ রোদনধ্বনি শুনিয়া নিতান্ত ভীত হইলাম। ভয়ে কলেবর কাঁপিতে লাগিল। যে দিকে শব্দ হইতেছিল, ঊর্দ্ধশ্বাসে সেই দিকে দৌড়িতে লাগিলাম।

অনন্তর নিঃশব্দ নিশীথপ্রভাবে দূর হইতেই “হা হতোঽস্মি—হা দগ্ধোঽস্মি—হায় কি হইল—রে দুরাত্মন্ পাপকারিন্ পিশাচ মদন! কি কুকর্ম্ম করিলি—আঃ পাপীয়সি দুর্ব্বিনীতে মহাশ্বেতে! ইনি তোমার কি অপকার করিয়াছিলেন—রে দুশ্চরিত্র চন্দ্র চণ্ডাল! এক্ষণে তুই কৃতকার্য্য হইলি—রে দক্ষিণানিল! তোর মনোরথ পূর্ণ হইল—হা পুত্ত্রবৎসল ভগবন্ শ্বেতকেতো! তোমার সর্ব্বস্ব অপহৃত হইয়াছে বুঝিতে পারিতেছ না? হে ধর্ম্ম তোমাকে আর অতঃপর কে আশ্রয় করিবে? হে তপঃ! এত দিনের পর তুমি নিরাশ্রয় হইলে। সরস্বতি! তুমি বিধবা হইলে। সত্য! তুমি অনাথ হইলে। হায়! এত দিনের পর সুরলোক শূন্য হইল। সখে! ক্ষণকাল অপেক্ষা কর, আমি তোমার অনুগমন করি। চিরকাল একত্র ছিলাম, এক্ষণে সহায়হীন, বান্ধবহীন হইয়া কিরূপে এই দেহ-