আর কে রক্ষা করিবে? একবার নেত্র উন্মীলন করিয়া এই অভাগিনীর প্রতি দৃষ্টিপাত কর, তাহা হইলে কৃতার্থ হই। আমার আর উপায়ান্তর নাই। আমি তোমার ভক্ত ও তোমার প্রতিই সাতিশয় অনুরক্ত। তোমা বই কাহাকেও জানি না। তুমি দয়া না করিলে আর কে দয়া করিবে? আঃ! এখনও জীবিত আছি! না পিতা মাতার বশবর্ত্তিনী হইলাম, না বন্ধুবর্গের ভয় রাখিলাম, না আত্মীয়গণের অপেক্ষা করিলাম। সমুদায় পরিত্যাগ করিয়া যাঁহার আশ্রয় লইতে আসিয়াছি, সেই প্রাণেশ্বর কোথায়? তিনি কি আমার নিমিত্ত প্রাণত্যাগ করিয়াছেন? অরে কৃতঘ্ন প্রাণ! তুই আর কেন যাতনা দিস্? আ—এই হতভাগিনীর মৃত্যু নাই! যমও এই পাপকারিণীকে স্পর্শ করিতে ঘৃণা করেন। কি জন্য আমি তোমাকে তাদৃশ অনুরক্ত দেখিয়াও গৃহে গমন করিয়াছিলাম? আর গৃহে প্রয়োজন কি? পিতা, মাতা, বন্ধুজন ও পরিজনের ভয় কি? হায়—এক্ষণে কাহার শরণাপন্ন হই। কোথায় যাই। অয়ি বনদেবতে! ভগবতি ভবিতব্যতে! অম্ব বসুন্ধরে! করুণা প্রকাশ করিয়া দয়িতের জীবন প্রদান কর। গ্রহাবিষ্টার ন্যায়, উন্মত্তার ন্যায় এইরূপ কত প্রকার বিলাপ করিয়াছিলাম সকল এক্ষণে স্মরণ হয় না। আমার বিলাপ শ্রবণে অজ্ঞান পশু পক্ষীরাও হাহাকার করিয়াছিল এবং পল্লবপাতচ্ছলে তরুগণেরও অশ্রুপাত হইয়াছিল। এত ক্ষণে পুনর্জীবিত হইয়াছেন মনে করিয়া প্রাণেশ্বরের হৃদয় স্পর্শ করিয়া দেখিলাম, কিন্তু জীবন কোথায়? প্রাণবায়ু একবার প্রয়াণ করিলে আর কি প্রত্যাগত হয়? দৈব প্রতিকূল হইলে আর কি শুভগ্রহ সঞ্চার হয়? আমার আগমন পর্য্যন্ত তুই প্রিয়তমের প্রাণ রক্ষা করিতে পারিস্ নাই বলিয়া একাবলী মালাকে কত তিরস্কার করিলাম। প্রসন্ন হও, প্রাণেশ্বরের প্রাণ দান কর বলিয়া কপিঞ্জলের চরণ ও তরলিকার কণ্ঠ ধারণ পূর্ব্বক দীন নয়নে রোদন করিতে লাগিলাম। সে সময়ে অভূতপূর্ব্ব, অশিক্ষিতপূর্ব্ব, অনুপদিষ্টপূর্ব্ব, যে সকল করুণ বিলাপ মুখ হইতে নির্গত হইয়াছিল
পাতা:কাদম্বরী.djvu/৬৯
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাদম্বরী।
৬৫