তাহা চিন্তা করিলেও আর মনে পড়ে না। সে এক সময়, তখন সাগরের তরঙ্গের ন্যায় দুই চক্ষু দিয়া অনবরত অশ্রুধারা পড়িতে লাগিল ও ক্ষণে ক্ষণে মূর্চ্ছা হইতে লাগিল।
এই রূপে অতীত আত্মবৃত্তান্তের পরিচয় দিতে দিতে, অতীত শোকদুঃখের অবস্থা স্মৃতিপথবর্ত্তিনী হওয়াতে, মহাশ্বেতা মূর্চ্ছাপন্ন ও চৈতন্যশূন্য হইয়া যেমন শিলাতল হইতে ভূতলে পড়িতেছিলেন অমনি চন্দ্রাপীড় কর প্রসারিত করিয়া ধরিলেন এবং অশ্রুজলার্দ্র তদীয় উত্তরীয় বল্কল দ্বারা বীজন করিতে লাগিলেন। ক্ষণকালের পর সংজ্ঞা প্রাপ্ত হইলে চন্দ্রাপীড় বিষণ্ণ বদনে ও দুঃখিত চিত্তে কহিলেন, কি দুষ্কর্ম্ম করিয়াছি! আপনার নির্ব্বাপিত শোক পুনরুদ্দীপিত করিয়া দিলাম। আর সে সকল কথায় প্রয়োজন নাই। উহা শুনিতে আমারও কষ্ট বোধ হইতেছে। অতিক্রান্ত দুরবস্থাও কীর্ত্তনের সময় প্রত্যক্ষানুভূতের ন্যায় ক্লেশজনক হয়। যাহা হউক পতনোন্মুখ প্রাণকে, অতীব দুঃখের পুনঃ পুনঃ স্মরণরূপ হুতাশনে নিক্ষিপ্ত করিবার আর আবশ্যকতা নাই।
মহাশ্বেতা দীর্ঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ এবং নির্ব্বেদ প্রকাশ পূর্ব্বক কহিলেন, রাজকুমার! সেই দারুণ ভয়ঙ্করী বিভাবরীতে যে প্রাণ পরিত্যাগ করিয়া যায় নাই, সে যে কখন পরিত্যাগ করিবে এমন বিশ্বাস হয় না। আমি এরূপ পাপীয়সী যে, মৃত্যুও আমার দর্শনপথ পরিহার করেন। এই নির্দ্দয় পাষাণময় হৃদয়ের শোক দুঃখ সকলই অলীক। এ নির্লজ্জ এবং আমাকেও স্বয়ং নির্লজ্জের অগ্রগণ্য করিয়াছে। যে শোক অবলীলাক্রমে সহ্য করিয়াছি, এক্ষণে কথা দ্বারা তাহা ব্যক্ত করা কঠিন কর্ম্ম কি? যে হলাহল পান করে হলাহলের স্মরণে তাহার কি হইতে পারে? আপনার সাক্ষাতে সেই বিষম বৃত্তান্তের যে ভাগ বর্ণনা করিলাম, তাহার পর এরূপ শোকোদ্দীপক কি আছে যাহা বলিতে ও শুনিতে পারা যাইবেক না। যে দুরাশা—মৃগতৃষ্ণিকা অবলম্বন করিয়া এই অকৃতজ্ঞ দেহভার বহন করিতেছি এবং সেই ভয়ঙ্কর ব্যাপারের পর প্রাণধারণের