হেতুভূত যে অদ্ভুত ঘটনা হইয়াছিল তাহাই এই বৃত্তান্তের পরভাগ, শ্রবণ করুন।
সেই রূপ বিলাপের পর প্রাণপরিত্যাগ করাই প্রাণেশ্বরের বিরহের প্রায়শ্চিত্ত স্থির করিয়া তরলিকাকে কহিলাম, অয়ি নৃশংসে! আর কত ক্ষণ রোদন করিব, কতই বা যন্ত্রণা সহিব। শীঘ্র কাষ্ঠ আহরণ করিয়া চিতা সাজাইয়া দাও, জীবিতেশ্বরের অনুগমন করি। বলিতে বলিতে মহাপ্রমাণ এক মহাপুরুষ চন্দ্রমণ্ডল হইতে গগনমণ্ডলে অবতীর্ণ হইলেন। তাঁহার পরিধান শুভ্র বসন, কর্ণে সুবর্ণকুণ্ডল, বক্ষঃস্থলে হার ও হস্তে কেয়ূর। সেরূপ উজ্জ্বল আকৃতি কেহ কখন দেখে নাই। দেহপ্রভায় দিগ্বলয় আলোকময় করিয়া গগন হইতে ভূতলে পদার্পণ করিলেন। শরীরের সৌরভে চতুর্দ্দিক্ আমোদিত হইল। চারি দিকে অমৃতবৃষ্টি হইতে লাগিল; পীবর বাহুযুগল দ্বারা প্রিয়তমের মৃত দেহ আকর্ষণ পূর্ব্বক “বৎসে মহাশ্বেতে! প্রাণত্যাগ করিও না, পুনর্ব্বার পুণ্ডরীকের সহিত তোমার সমাগম সম্পন্ন হইবেক।” গম্ভীর স্বরে এই কথা বলিয়া গগনমার্গে উঠিলেন। আকস্মিক এই বিস্ময়কর ব্যাপার দর্শনে বিস্মিত ও ভীত হইয়া কপিঞ্জলকে ইহার তত্ত্ব জিজ্ঞাসা করিলাম। কপিঞ্জল আমার কথায় কিছুই উত্তর না দিয়া “রে দুরাত্মন্! বন্ধুকে লইয়া কোথায় যাইতেছিস্?” রোষ প্রকাশ পূর্ব্বক এই কথা কহিতে কহিতে তাঁহার পশ্চাৎ ধাবমান হইলেন। আমি উন্মুখী হইয়া দেখিতে লাগিলাম। দেখিতে দেখিতে তাঁহারা তারাগণের মধ্যে মিশাইয়া গেলেন। কপিঞ্জলের অদর্শন, প্রিয়তমের মৃত্যু অপেক্ষাও দুঃখজনক বোধ হইল। যে ঘটনা উপস্থিত ইহার মর্ম্ম বুঝাইয়া দেয় এরূপ একটী লোক নাই। তৎকালে কি কর্ত্তব্য কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, তরলিকে! তুমি ইহার কিছু মর্ম্ম বুঝিতে পারিয়াছ? স্ত্রীস্বভাবসুলভ ভয়ে অভিভূত এবং আমার মরণাশঙ্কায় উদ্বিগ্ন, বিষণ্ণ ও কম্পিতকলেবর হইয়া তরলিকা স্খলিত গদ্গদ বচনে বলিল, ভর্ত্তৃদারিকে! না, আমি কিছুই বুঝিতে পারি