আছি বলিয়া তিরস্কার করিয়াছ? যদি মনের সহিত উহা বলিয়া থাক, তোমার অন্তঃকরণে কোন অভিসন্ধি আছে, সন্দেহ নাই। এই অধীনকে একবারে পরিত্যাগ করিবে ইহা এত দিন স্বপ্নেও জানি নাই। আমার হৃদয় তোমার প্রতি যেরূপ অনুরক্ত তাহা জানিয়াও এইরূপ নিষ্ঠুর বাক্য বলিতে তোমার কিছুমাত্র লজ্জা হইল না? আমি জানিতাম তুমি স্বভাবতঃ মধুরভাষিণী ও প্রিয়বাদিনী। এক্ষণে এরূপ পরুষ ও অপ্রিয় কথা কহিতে কোথায় শিখিলে? আপাততঃ মধুররূপে প্রতীয়মান, কিন্তু অবসানবিরস কর্ম্মে কোন্ ব্যক্তির সহসা প্রবৃত্তি জন্মে? আমি ত প্রিয়সখীর দুঃখে নিতান্ত দুঃখিনী হইয়াছি। এ সময়ে কি রূপে অকিঞ্চিৎকর বিবাহের আড়ম্বর করিয়া আমোদ প্রমোদ করিব? এ সময় আমোদের সময় নয় বলিয়াই সেইরূপ প্রতিজ্ঞা করিয়াছি। প্রিয়সখীর দুঃখে দুঃখিত অন্তঃকরণে সুখের আশা কি? সম্ভোগেরই বা স্পৃহা কি? মানুষের ত কথাই নাই, পশুপক্ষীরাও সহচরের দুঃখে দুঃখ প্রকাশ করিয়া থাকে। দিনকরের অস্তগমনে নলিনী মুকুলিত হইলে তৎসহবাসিনী চক্রবাকীও প্রিয়সমাগম পরিত্যাগ পূর্ব্বক সারা রাত্রি চীৎকার করিয়া দুঃখ প্রকাশ করে। যাহার প্রিয়সখী বনবাসিনী হইয়া দিনযামিনী সাতিশয় ক্লেশে কাল যাপন করিতেছে, সে, সুখের অভিলাষিণী হইলে লোকে কি বলিবে? আমি তোমার নিমিত্ত গুরুবচন অতিক্রম, লজ্জা ভয় পরিত্যাগ ও কুলকন্যাবিরুদ্ধ সাহস অবলম্বন পূর্ব্বক, দুস্তর প্রতিজ্ঞা অবলম্বন করিয়াছি; এক্ষণে যাহাতে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ না হয় ও লোকের নিকট লজ্জা না পাই, এরূপ করিও।” এই বলিয়া কেয়ূরক ক্ষান্ত হইল।
কেয়ূরকের কথা শুনিয়া মহাশ্বেতা মনে মনে ক্ষণকাল অনুধ্যান করিয়া কহিলেন, কেয়ূরক! তুমি বিদায় হও, আমি স্বয়ং কাদম্বরীর নিকট যাইতেছি। কেয়ূরক প্রস্থান করিলে চন্দ্রাপীড়কে কহিলেন, রাজকুমার! হেমকূট অতি রমণীয় স্থান, চিত্ররথের রাজধানী অতি আশ্চর্য্য, কাদম্বরী অতি মহানুভবা। যদি দেখিতে কৌতুক