বয়স, বংশ ও তথায় আগমনহেতু সমুদায় জিজ্ঞাসা করিতেছেন। চামরধারিণীরা অনবরত চামর বীজন করিতেছে।
শশিকলাদর্শনে জলনিধির জল যেরূপ উল্লাসিত হয়, কাদম্বরীদর্শনে চন্দ্রাপীড়ের হৃদয় সেইরূপ উল্লাসিত হইল। মনে মনে চিন্তা করিতে লাগিলেন, আহা! আজি কি রমণীয় রত্ন দেখিলাম! এরূপ সুন্দরী কুমারী ত কখন নেত্রপথের অতিথি হয় নাই! আজি নয়নযুগল সফল ও চিত্ত চরিতার্থ হইল। জন্মান্তরে এই লোচনযুগল কত ধর্ম্ম ও পুণ্য কর্ম্ম করিয়াছিল, সেই ফলে কাদম্বরীর মনোহর মুখারবিন্দ দেখিতে পাইল। বিধাতা আমার সকল ইন্দ্রিয় লোচনময় করেন নাই কেন? তাহা হইলে, সকল ইন্দ্রিয় দ্বারা এক বার অবলোকন করিয়া আশা পূর্ণ করিতাম। কি আশ্চর্য্য! যত বার দেখি তত আরও দেখিতে ইচ্ছা হয়। বিধাতা এরূপ রূপাতিশয় নির্ম্মাণের পরমাণু কোথায় পাইলেন। বোধ হয়, যে সকল পরমাণু দ্বারা ইহার রূপ লাবণ্য সৃষ্টি করিয়াছেন তাহারই অবশিষ্ট অংশ দ্বারা কমল, কুমুদ, কুবলয় প্রভৃতি কোমল বস্তুর সৃষ্টি করিয়া থাকিবেন। ক্রমে গন্ধর্ব্বকুমারীর ও রাজকুমারের চারি চক্ষু একত্র হইল। কাদম্বরী রাজকুমারকে দেখিয়া মনে মনে কহিলেন, কেয়ূরক যে অপরিচিত যুবা পুরুষের কথা কহিতেছিল, বোধ হয়, ইনিই সেই ব্যক্তি। আহা! এরূপ সুন্দর ত কখন দেখি নাই। গন্ধর্ব্বনগরেও এরূপ রূপাতিশয় দেখিতে পাওয়া যায় না। এইরূপে উভয়ের সৌন্দর্য্যে উভয়ের মন আকৃষ্ট হইল। কাদম্বরী নিমেষশূন্য লোচনে চন্দ্রাপীড়ের রূপ লাবণ্য বারংবার অবলোকন করিতে লাগিলেন; কিন্তু পরিতৃপ্ত হইলেন না। যতবার দেখেন মনে নব নব প্রীতি জন্মে।
বহু কালের পর প্রিয়সখী মহাশ্বেতাকে সমাগত দেখিয়া কাদম্বরী আনন্দসাগরে মগ্ন হইলেন ও সহসা গাত্রোত্থান করিয়া সস্নেহে গাঢ় আলিঙ্গন করিলেন। মহাশ্বেতাও প্রত্যালিঙ্গন করিয়া কহিলেন, সখি! ইনি ভারতবর্ষের অধিপতি মহারাজ তারাপীড়ের