ও সমীরণ কুসুমসৌরভে সুগন্ধময়। চতুর্দ্দিকে সরোবর, অভ্যন্তরে হিমগৃহ। বোধ হয় যেন, বরুণ জলক্রীড়া করিবার নিমিত্ত ঐ গৃহ নির্ম্মাণ করিয়াছেন। তথায় প্রবেশ মাত্র বোধ হয় যেন তুষারে অবগাহন করিতেছি। ঐ গৃহে সুশীতলশিলাতলবিন্যস্ত শৈবাল ও নলিনীদলের শয্যায় শয়ন করিয়াও কাদম্বরীর গাত্রদাহ নিবারণ হইতেছে না, প্রবেশিয়া দেখিলেন। কাদম্বরী রাজকুমারকে দেখিবামাত্র অতিমাত্র সসম্ভ্রমে গাত্রোত্থান করিয়া যথোচিত সমাদর করিলেন। মেঘাগমে চাতকীর যেরূপ আহ্লাদ হয়, চন্দ্রাপীড়ের আগমনে কাদম্বরী সেইরূপ আহ্লাদিত হইলেন। সকলে আসনে উপবিষ্ট হইলে, ইনি রাজকুমারের তাম্বূলকরঙ্কবাহিনী ও পরমপ্রীতিপাত্র, ইঁহার নাম পত্রলেখা, এই বলিয়া কেয়ূরক পত্রলেখার পরিচয় দিল। পত্রলেখা বিনীত ভাবে মহাশ্বেতা ও কাদম্বরীকে প্রণাম করিল। তাঁহারা যথোচিত সমাদর ও সম্ভাষণ পূর্ব্বক হস্ত ধারণ করিয়া আপন সমীপদেশে বসাইলেন এবং সখীর ন্যায় জ্ঞান করিতে লাগিলেন।
চন্দ্রাপীড় চিত্ররথতনয়ার তদানীন্তন অবস্থা দেখিয়া মনে মনে কহিলেন, আমার হৃদয় কি দুর্ব্বিদগ্ধ! মনোরথ ফলোন্মুখ হইয়াছে তথাপি বিশ্বাস করিতেছে না। ভাল, কৌশল করিয়া দেখা যাউক এই স্থির করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, দেবি! তোমার এরূপ অপরূপ ব্যাধি কোথা হইতে সমুত্থিত হইল? তোমাকে আজি এরূপ দেখিতেছি কেন? মুখকমল মলিন হইয়াছে, শরীর শীর্ণ হইয়াছে, হঠাৎ দেখিলে চিনিতে পারা যায় না। যদি আমা হইতে এ রোগের প্রতিকারের কোন সম্ভাবনা থাকে, এখনই বল। আমার দেহ দান বা প্রাণ দান করিলেও যদি সুস্থ হও আমি এখনি দিতে প্রস্তুত আছি। কাদম্বরী বালা ও স্বভাবমুগ্ধা হইয়াও অনঙ্গের উপদেশপ্রভাবে রাজকুমারের বচনচাতুরীর যথার্থ ভাবার্থ বুঝিলেন। কিন্তু লজ্জাপ্রযুক্ত বাক্য দ্বারা উত্তর দিতে অসমর্থ হইয়া ঈষৎমুহাস্য করিয়া সচিত উত্তর প্রদান করিলেন। মদলেখা তাহারই