ভাবার্থ ব্যক্ত করিয়া কহিল, রাজকুমার! কি বলিব আমরা এরূপ অপরূপ ব্যাধি ও অদ্ভুত সন্তাপ কখন কাহারও দেখি নাই। সন্তাপিত ব্যক্তির নলিনীকিসলয় হুতাশনের ন্যায়, জ্যোৎস্না উত্তাপের ন্যায়, সমীরণ বিষের ন্যায় বোধ হয়, ইহা আমরা কখনও শ্রবণ করি নাই। জানি না এ রোগের কি ঔষধ আছে। প্রণয়োন্মুখ যুবজনের অন্তঃকরণ কি সন্দিগ্ধ! কাদম্বরীর সেইরূপ অবস্থা দেখিয়া ও মদলেখার সেইরূপ উত্তর শুনিয়াও চন্দ্রাপীড়ের চিত্ত সন্দেহদোলা হইতে নিবৃত্ত হইল না। তিনি ভাবিলেন, যদি আমার প্রতি কাদম্বরীর যথার্থ অনুরাগ থাকিত, এ সময় স্পষ্ট করিয়া ব্যক্ত করিতেন। এই স্থির করিয়া মহাশ্বেতার সহিত মধুরালাপগর্ভ নানাবিধ কথাপ্রসঙ্গে ক্ষণ কাল ক্ষেপ করিয়া পুনর্ব্বার স্কন্ধাবারে চলিয়া গেলেন। কাদম্বরীর অনুরোধে কেবল পত্রলেখা তথায় থাকিল।
চন্দ্রাপীড় স্কন্ধাবারে প্রবেশিয়া উজ্জয়িনী হইতে আগত এক বার্ত্তাবহকে দেখিতে পাইলেন। প্রীতিবিস্ফারিত লোচনে পিতা, মাতা, বন্ধু, বান্ধব, প্রজা, পরিজন প্রভৃতি সকলের কুশলবার্ত্তা জিজ্ঞাসিলেন। সে প্রণতিপূর্ব্বক দুই খানি লিখন তাঁহার হস্তে প্রদান করিল। যুবরাজ পিতৃপ্রেরিত পত্রিকা অগ্রে পাঠ করিয়া তদনন্তর শুকনাসপ্রেরিত পত্রের অর্থ অবগত হইলেন। এই লিখিত ছিল “বহু দিবস হইল তোমরা বাটী হইতে গমন করিয়াছ। অনেক কাল তোমাদিগকে না দেখিয়া আমরা অতিশয় উৎকণ্ঠিতচিত্ত হইয়াছি। পত্রপাঠ মাত্র উজ্জয়িনীতে না পঁহুছিলে, আমাদিগের উদ্বেগ বৃদ্ধি হইতে থাকিবে।” বৈশম্পায়নও যে দুইখানি পত্র পাইয়াছিলেন তাহাতেও এইরূপ লিখিত ছিল। যুবরাজ পত্র পাইয়া মনে মনে চিন্তা করিলেন কি করি, এক দিকে গুরুজনের আজ্ঞা, আর দিকে প্রণয়প্রবৃত্তি। গন্ধর্ব্বরাজতনয়া কথা দ্বারা অনুরাগ প্রকাশ করেন নাই বটে, কিন্তু ভাবভঙ্গির দ্বারা বিলক্ষণ লক্ষিত হইয়াছে। ফলতঃ তিনি অনুরাগিণী