প্রদেশ খনন করাতে ছোট ছোট কূপ নির্ম্মিত হইয়াছে। এই ভয়ঙ্কর কান্তার অতিক্রম করিতে দিবাবসান হইল। দূর হইতে দেখিলেন সম্মুখে এক রক্তবর্ণ পতাকা সন্ধ্যাসমীরণে উড্ডীন হইতেছে।
রাজকুমার সেইদিক্ লক্ষ্য করিয়া কিঞ্চিৎ দূর গমন করিলেন। দেখিলেন চতুর্দ্দিকে খর্জ্জূরবৃক্ষের বনমধ্যে এক মন্দিরে ভগবতী চণ্ডিকার প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত আছে। রক্তচন্দনলিপ্ত রক্তোৎপল ও বিল্বদল সম্মুখে বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে। দ্রাবিড়দেশীয় এক ধার্ম্মিক তথায় উপবেশন করিয়া কখন বা যক্ষকন্যার মনে অনুরাগসঞ্চারের নিমিত্ত রুদ্রাক্ষমালা জপ, কখন বা দুর্গার স্তুতিপাঠ করিতেছেন। তিনি জরাজীর্ণ, কালগ্রাসে পতিত হইবার অধিক বিলম্ব নাই, তথাপি ভগবতী পার্ব্বতীর নিকট কখন বা দক্ষিণাপথের অধিরাজ্য কখন বা ভূমণ্ডলের আধিপত্য কামনা করিতেছেন। কখন বা প্রেয়সীবশীকরণতন্ত্রমন্ত্র শিখিতেছেন ও তীর্থদর্শনসমাগতা বৃদ্ধা পরিব্রাজিকাদিগের অঙ্গে বশীকরণচূর্ণ নিক্ষেপ করিতেছেন। কখন বা হস্ত বাজাইয়া মস্তক সঞ্চালন পূর্ব্বক মশকের ন্যায় গুন গুন শব্দে গান করিতেছেন। জগদীশ্বরের কি আশ্চর্য্য কৌশল! তিনি যেরূপ এক স্থানে সমুদায় সৌন্দর্য্যের সমাবেশ করিতে পারেন, সেইরূপ তাঁহার কৌশলের সমুদায় বৈরূপ্যও এক স্থানে সন্নিবিষ্ট হইয়া থাকে। দ্রাবিড়দেশীয় ধার্ম্মিকই তাহার প্রমাণস্বরূপ। তিনি কাণা, খঞ্জ, বধির ও রাত্র্যন্ধ; এরূপ লম্বোদর যে রাক্ষসের ন্যায় রাশি রাশি ভোজন করিয়াও উদর পূর্ণ হয় না। শুষ্কলতারচিত পুষ্পকরণ্ডক ও আঙ্কুশিক লইয়া বনে বনে ভ্রমণ ও বৃক্ষে বৃক্ষে আরোহণ করাতে বানরগণ কুপিত হইয়া তাঁহার নাসা কর্ণ ছিন্ন করিয়াছে এবং ভল্লূকের তীক্ষ্ণ নখে গাত্র ক্ষত বিক্ষত হইয়াছে। রাজকুমারের লোকজন তথায় উপস্থিত হইবামাত্র তিনি তাহাদের সহিত কলহ আরম্ভ করিলেন।