S8 কাদম্বরী । তপোবন দেখিয়া আমার অন্ত:করণ আহ্বাদে পুলকিত হইল। অভ্যন্তরে প্রবেশিয়া দেখিলাম রক্তপল্লবশোভিত রক্তাশোকতরুর ছায়ায় পরিষ্কৃত পবিত্র স্তানে বেত্রাসনে ভগবান মহাতপা মহর্ষি জাবালি বসিয়া আছেন। অন্তান্ত মুনিগণ চতুর্দিকে বেষ্টন করিয়া উপবিষ্ট রহিয়াছেন। মহর্ষি অতিপ্রাচীন, জরার প্রভাবে মস্তকের জটাভার ও গাত্রের লোম সকল ধবলবৰ্ণ, কপালে ত্ৰিবলি, গণ্ডস্থল নিম্ন, শিরা ও পঞ্জরের অস্থি সকল বহির্গত, এবং শ্বেতবর্ণ রোমে কৰ্ণবিবর আচ্ছাদিত। র্তাহার প্রশান্ত গম্ভীর আকৃতি দেখিবামাত্র বোধ হয় যেন, তিনি করুণরসের প্রবাহ, ক্ষমা ও সন্তোষের আধার, শান্তিলতার মূল, ক্রোধভুজঙ্গের মহামন্ত্র, সৎপথের প্রদর্শক, এবং সৎস্বভাবের আশ্রয়। র্তাহাকে দেখিয়া আমার অন্তঃকরণে একদা ভয় ও বিস্ময়ের আবির্ভাব হইল। ভাবিলাম মহৰ্ষির কি প্রভাব । ইহার প্রভাবে তপোবনে হিংসা, দ্বেষ, বৈর, মাৎসৰ্য্য, কিছুই নাই। ভুজঙ্গের আতপতাপিত হইয়া শিথীর শিখাকলাপের ছায়ায় মুখে শয়ন করিয়া আছে। হরিণশীবকেরা সিংহশাবকের সহিত সিংহীর স্তন পান করিতেছে। করভ সকল ক্রীড়া করিতে করিতে শুণ্ড দ্বারা সিংহকে আকর্ষণ করিতেছে। মৃগকুল অব্যাকুলচিত্তে বৃকের সহিত একত্র চরিতেছে। এবং শুষ্ক বৃক্ষও মুকুলিত হইয়াছে। বোধ হয় যেন, সত্যযুগ কলিকালের ভয়ে পলাইয়া তপোবনে আসিয়া অবস্থিতি করিতেছে। অনন্তর ইতস্ততঃ দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া দেখিলাম আশ্রমস্থিত তরুগণের শাখায় মুনিদিগের বন্ধল শুকাইতেছে, কমণ্ডলু ও জপমালা বুলিতেছে এবং মূলদেশে বসিবার নিমিত্ত বেদি নিৰ্ম্মিত হইয়াছে বোধ হয় যেন, বৃক্ষ সকলও তপস্থিবেশ ধারণপূর্বক তপস্যা করিতে আরম্ভ করিয়াছে। ১৮
পাতা:কাদম্বরী (চতুর্থ সংস্করণ).djvu/৫৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।