পাতা:কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড).djvu/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রভাত-সঙ্গীত

ধীরে ধীরে মহারণ্য নাড়িতেছে জটাময় মাথা,
ঝরঝর মরমর উঠিতেছে সুগম্ভীর গাথা।
চেতনার কোলাহলে দিবস পূরিছে দশ-দিশি,
ঝিল্লি-রবে একমন্ত্র জপিতেছে তাপসিনী নিশি।
সমস্ত একত্রে মিলি ধ্বনিয়া ধ্বনিয়া চারিভিত,
উঠাইছে মহা-হৃদে মহা এক স্বপন-সঙ্গীত।
স্বপনের রাজ্য এই, স্বপন-রাজ্যের জীবগণ
দেহ ধরিতেছে কত মুহুর্মুহু নূতন নূতন।
ফুল হয়ে যায় ফল, ফুল ফল বীজ হয় শেষে,
নব নব বৃক্ষ হয়ে বেঁচে থাকে কানন-প্রদেশে।
বাষ্প হয়, মেঘ হয়, বিন্দু বিন্দু বৃষ্টিবারিধারা,
নির্ঝর তটিনী হয়, ভাঙি ফেলে শিলাময় কারা।
নিদাঘ মরিয়া যায়, বরষা শ্মশানে আসি তার
নিভায় জ্বলন্ত চিতা বরষিয়া অশ্রুবারিধার।
বরষা হইয়া বৃদ্ধ শ্বেতকেশ শীত হয়ে যায়,
যযাতির মত পুন বসন্ত-যৌবন ফিরে পায়।
এক শুধু পুরাতন, আর সব নূতন নূতন,
এক পুরাতন হৃদে উঠিতেছে নূতন স্বপন।
অপূর্ণ স্বপন-সৃষ্ট মানুষেরা অভাবের দাস,
জাগ্রত পূর্ণতাতরে পাইতেছে কত না প্রয়াস।
চেতনা, ছিঁড়িতে চাহে আধ-অচেতন আবরণ,
দিনরাত্রি এই আশা, এই তার একমাত্র পণ।

১৩৮