পাতা:কাব্যের কথা - চিত্তরঞ্জন দাশ.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

80 কাব্যের কথা সমস্ত ভাবটিকে বিশ্বের সাৰ্ব্বজনীন সত্যের উপর রাখিয়া তাহাকে গাঁথিয়া দিলেন। ভারত শিল্পের আদর্শে যেমন বিশ্বের সর্বাঙ্গীন ক্ষুক্তির কথা পাওয়া যায়, ইহাও ঠিক সেই রকম। দেবালয়-প্ৰতিষ্ঠার মধ্যে যে ধারা ভারত-শিল্পে পাওয়া যায়, সে দেবমন্দিবে প্ৰত্যেক পাষাণখণ্ডের সার্থকতা থাকে ; বিশ্বকে আদর্শ করিয়া যেখানে যেটি যেমন ভাবে থাকিলে সুন্দর হয়, বিচিত্র হয়, সেখানে সেটি ঠিক তেমনি ভাবে গাথিয়া তোলা, এমন কি সেই মন্দিরের স্থানে স্থানে স্তুপীকৃত প্ৰস্তরখণ্ড ও বালুর রাস জমান থাকে, খণ্ড প্ৰস্তর যে পুর্ণতা লাভ করে নাই, তাহার স্বাধীন পরিণতি যে বিশ্বের স্থানে স্থানে হয় নাই, তাঁহার নিদর্শন। বিশ্বকে আদর্শ করিয়াই ইহার রচনা । কবি চণ্ডিদাসের পদাবলী তেমনি যেন প্ৰকাণ্ড মন্দির। ভারত-শিল্পে স্থাপত্য যেমন অতুলনীয়, চণ্ডিীদাসের পদাবলী তেমনি সাৰ্ব্বজনীন। বিদ্যাপতি ও চণ্ডিীদাসের পরস্পরের এই সমস্ত পদাবলী পুর্বরাগ হইতে শেষ পৰ্যন্ত দেখাইবার স্থান। এখানে নাই, কেননা, তাহা অতি বিস্তৃতভাবে, বিশদভাবে, না দেখাইলে তাহায় ঠিক চরম উদ্যেশ্য সাধিত হয় না। তবে উভয়ের পদাবলীর রসবিভাগ করিয়া তাহার অনুভূতির কথা বুঝাইতে চেষ্টা করিব। বিদ্যাপতির প্ৰেমে বেদন অপেক্ষা সুখের আতিশয্যই বেশী । তাহাতে দুঃখটুকু যেন সোহাগ করিয়া ঢালিয়া দেওয়া তাহাতে প্ৰাণের তীব্ৰতা, আন্তরিকতা নাই। কিন্তু প্ৰাণের ভিতর যে অতলস্পর্শ সমুদ্র আছে, তাহাতে গাহন করিতে পারেন নাই। সে ত্ৰিভুবনব্যাপী তন্ময় বিরহ বিদ্যাপতির ভিতর নাই। আছে ছন্দ সুর তাল, অনন্যসাধারণ উপমার ছটা, ভিতরের কথা ভাল করিয়া অনুভূতিতে না আসিলে, উপরের কথাই বেশী হইয়া পড়ে। অলঙ্কারেই সৌন্দৰ্য্যকে স্নান করে। বিদ্যাপতির কাব্যে কতকটা তাহাঁই ঘটিয়াছে।