শ্রমের মাতাল পাষাণের চাপে উঠিছে পাগল হ’য়ে,
রসাতল পানে ছুটে যেতে চায় বোঝার বালাই ল'য়ে;
জীবন বিকায়ে ধনের দুয়ারে খাটিয়া খাটিয়া মরে
কলঙ্কহীন শ্রমের অন্নে জঠর নাহিক ভরে।
হেথায় কুবের ফুলিছে, ফাঁপিছে,—ফুলিছে টাকার থলি,
চিবুকের তলে বাড়িছে তাহার দ্বিতীয় পাকস্থলী!
নর-বানরের সুবিপুল ভারে মানুষ মরিল, হায়,
মরিল মরম, মরিল ধরম, ধরণী গুমরি’ ধায়।
তবু ঘর্ঘরে, চলে মন্থরে, জুড়িয়া সকল পথ,
ধনী নির্ধনে সমান করিয়া জগন্নাথের রথ!
মানুষ কাঁদিছে, মানুষ মরিছে, বেঁচে আছে তরবার!—
এর চেয়ে সেই বন্য জীবন ভাল ছিল শতবার;
সেথায় ছিল না শৃঙ্খল জাল, বন্দী ছিল না কেউ,
ছায়া-সুগহন কাননের মাঝে শুধু সবুজের ঢেউ,
জটিল গুল্ম কণ্টকে ফুলে উঠিত আকুল হ’য়ে,
দেবতার শ্বাস আসিত বাতাস ফলের গন্ধ ব’য়ে,
পশু ও মানুষে ছিল মেলামেশা ভাষাহীন জানাজানি,
ছোট ছোট ভাই ভগিনীর মত ছিল বহু হানাহানি;
জীবন আছিল, আনন্দ ছিল, মৃত্যুও ছিল সেথা,
ছিল না কেবল রহিয়া রহিয়া মন মরিবার ব্যথা।
ছিল না সেথায় দুর্জ্জয় লোভে দহন দিবস নিশা,—
লুটিয়া, পীড়িয়া, দলিয়া, ছিঁড়িয়া প্রভু হইবার তৃষা।
ছিল না এমন খাজানার খাত খাজাঞ্চী-খানা জুড়ি'
সেলামী ছিল না, গোলামী ছিল না হাইতোলা-সাথে তুড়ি।
পাতা:কাব্য-সঞ্চয়ন (সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত).djvu/৩১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।