হায় বনবাস! সজীব, সরস, শতগুণে তুমি শ্ৰেয়,
এই পোড়া মাটি রস-বাসহীন মানুষে ক'রেছে হেয়;
এই কাঠ খোঁটা—বসন্তে যাহা আর ফোটাবে না ফুল,
এরি সহবাসে নীরস মানুষ,—জীবনে মানিছে ভুল।
ঊর্ধ্বে উঠেছে দুর্গ-প্রাচীর, মানব-শোণিতে আঁকা,
আকাশ সুনীল কুটীর-বাসীর চক্ষে পড়েছে ঢাকা;
সাগরের বায়ু বাধা পেয়ে পেয়ে সাগরে গিয়েছে ফিরে,
মানবের মন এমনি করিয়া মরিয়া যেতেছে ধীরে।
তরবারি শুধু ফিরিছে নাচিয়া বিপুল হেলার ভরে,
বাঁধন কাটিতে জন্ম যাঙ্গার সেই সে বন্দী করে!
বলবান যেই,—ধৰ্ম্ম যাহার ক্ষত ও ক্ষতির ত্রাণ,
সেই সে ঘটায় জগতের ক্ষতি, সেই করে ক্ষত দান!
অমল যশের লালসায় হায় জয়ের মশাল জালি',
নিরীহ জনের রক্তে কেবল লভে কীৰ্ত্তির কালি।
বন্ধ্যা সোনায় এরা বড় জানে,-জননী মাটির চেয়ে,
সফলত যার অণুতে রেণুতে চিরদিন আছে ছেয়ে;
তবু এরা জ্ঞানী, তবু এর মানী, এরা ভূস্বামী তবু,
ভূমির ভক্ত সেবক যাহারা–এরা তাহাদের প্রভু!
যাহা প্রাণপাতে কঠিন মাটিতে ফলায় ফসল ফল,
তারা আছে শুধু খাটিয়া বহিয়া ফেলিবারে শ্ৰমজল;
তারা আছে শুধু কথায় কথায় হইতে যোত্রহীন,
‘দেড়া' দুনো’ দিয়ে বর্ষে বর্ষে কেবল বহিতে ঋণ;
সমুখে করাল রয়েছে ‘আকাল’, মৃত্যু রয়েছে পিছে,
ঘিরি' চারিধার আছে হাহাকার, পালাবার আশা মিছে।
পাতা:কাব্য-সঞ্চয়ন (সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত).djvu/৩২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।