এত বড় এই ধরণীর বুকে তাহাদেরি নাহি ঠাঁই,
তবুও ভূমির ভৃত্য, ভক্ত, ভর্ত্তা সে তাহারাই!
তাদের নয়নে ফলময়ী ভূমি স্নেহময়ী মা'র চেয়ে,
রমণীর চেয়ে রমণীয়া—যবে কাল মেঘ আসে ছেয়ে;
কন্যার চেয়ে কান্তিশালিনী, হাস্যশোভনা ভূমি;–
কি বুঝিবে মূঢ় রাজস্বভুক্, এর কি বুঝিবে তুমি?
তবুও সমাজ তোমা হেন জনে ভূস্বামী বলি’ মানে;
প্রকৃত স্বামী সে দীন কৃষকের কথা কে তুলিবে কানে?
বলের গৰ্ব্ব পৰ্ব্বত হয়ে বাড়ায় ধরার ভার,
চলে লুণ্ঠন’ কুণ্ঠাবিহীন—ঘরে ঘরে হাহাকার;
প্রবল দস্যু বিকট হাস্যে বিশ্বভুবন মথি’,
সুনামের হার গলায় দোলায়ে চলেছে অবাধ-গতি!
নিরীহ জনের নয়ন ধাঁধিয়া ঘুরাইয়া তরবারি,
বালকে বৃদ্ধে বধিয়া চলেছে, বাঁধিয়া চলেছে নারী!
পিশাচের প্রায় ক্রূর হিংসায় শবেরে দিতেছে ফাঁসী,
সপ্ত সাগর মানে পরাভব ধু’তে কলঙ্ক-রাশি!
ইতিহাস তবু তাহাদেরি দাসী—নিত্য ছলনাময়ী,
ধন-বৈভব তাহাদেরি সব, তারা বীর, তারা জয়ী!
ক্ষুদ্র প্রদীপে নিবাতে, পবন! যতন তোমার যত,
সেই শিখা যবে দহে গো ভবন কোথা রহে তব ব্ৰত?
হায় সংসার, ক্ষুদ্র মশার দংশন নাহি সহ,
মৃত্যুর চর ক্রূর বিষধর তারে পূজ’ অহরহ!
তবু উদ্যত রয়েছে নিয়ত বৈভবে দিয়ে লাজ,
বলী দুৰ্ব্বলে করিতে সমান য়িশ্বদেবের বাজ!
পাতা:কাব্য-সঞ্চয়ন (সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত).djvu/৩৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।