মুক্ত রাখ গো মনের দুয়ার, মানুষ এসেছে কাছে,
ঘুচাও বিরোধ, বাধা, ব্যবধান, বিঘ্ন যা’ কিছু আছে;
বলের দর্প, কুলের গৰ্ব্ব, ধনের গরিমা ল'য়ে,—
মুক্ত বাতাসে বাক্য-বেড়ার ফেলো না ফেলো না ছেয়ে;–
জননীর জাতি, দেবতার সাথী নারীরে বোল না হেয়,
অৰ্দ্ধ জগতে কর না গো হীন, জগতের মুখ চেয়ো।
স্নেহবলে নারী বক্ষ-শোণিতে ক্ষীর করি’ পারে দিতে;
কে বলে ছোট সে পুরুষের কাছে—কোন্ মূঢ় অবনীতে?
তারা-সুগহন গগনের পথে চলেছে মরাল-তরী,
তারি মাঝে নারী পুষ্প-প্রতিমা সুষমা পড়িছে ঝরি’;
চরণের বহু নিম্নে জগৎ স্তব্ধ হইয়া আছে,
নন্দন-বন-বিহারী পবন ফিরিছে পায়েরি কাছে;
কুন্তল দোলে, মস্থরে চলে স্বপন-তরণীখানি,
সুপ্ত জগতে চির-জাগ্রতা প্রেমময়ী কল্যাণী।
কত কবি মিলে বিশ্ব-নিখিলে বন্দনা রচে তার।
সঙ্গীত ভুলি দুটি আঁখি তুলি’ চাহে শুধু শতবার,
মুগ্ধ নয়ন স্বপ্ন-মগন, মৌন বচন সব,
সেতার, কানুন, বীণ, তান্পুরা মানে যেন পরাভব!
গানের দেবতা, প্রাণের দেবতা, ধ্যানের দেবতা নারী;
বনের পুষ্প, মনের ভক্তি সে কেবল তারি—তারি।
ক্ষেত্র বীজের প্রাচীন কাহিনী তুলে আর নাহি কাজ,
গেছে সংশয়, রমণীর জয়,—জগত গাহিছে আজ;–
কত না বালক ধন্য হয়েছে মায়ের মুরতি লভি,
কত না বালিকা বহিয়া বেড়ায় জনকের মুখ ছবি;–
পাতা:কাব্য-সঞ্চয়ন (সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত).djvu/৩৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।