কত না লক্ষ পুষ্পক রথ, যাত্রী কত না তায়,
কোন্ সে তীর্থে যাত্রা সবার, কে বলিতে পারে, হায়;
কা’রা করেছিল যাত্রা প্রথম? পৌঁছিবে কা’রা শেষ?
রথে রথে বাড়ে অস্থির স্তূপ, শাদা হয় কাল বেশ!
রথের মাঝারে জন্ম মরণ, চিনে জীব শুধু রথ,
সমুখে পিছনে শুধু বিস্তার—লীমাহীন ছায়া পথ!
কলরব করি’ যাত্রী চলেছে, গান গেয়ে, কেঁদে, হেসে,
মৌন আকাশে শব্দ পশে না, বায়ু স্রোতে যায় ভেসে;
প্রার্থনা ভেসে কুলে ফিরে এসে ব্যথিয়া তুলে গো মন,
মানুষ আবার মানুষে আঁকড়ি’ প্রাণে পায় সাত্ত্বন!
সেই মানুষেরে ক’র’না গো হেলা তারে ক’র’না গো ঘৃণা,
এ জগতে হায় কি আছে নরের—নরের মমতা বিনা?
অভিষেক যা’রে করেছে তপন, আর সে অশুচি নাই,
জ্যোৎস্না মদিরা যে করেছে পান সেই সে আমার ভাই;
সমীরে যাহার নিশ্বাস আছে, সে আছে আমারি বুকে,
সলিলে যাহার আছে আঁখিজল সে আমার দুঃখে সুখে;
কুসুম-সরল ধরণী যাদের বহিছে পরাণখানি,
জীবনে মরণে কাছে আছে তারা, মনে মনে তাহা জানি।
জাগ’ জাগ’ ওগো বিশ্বমানব! বারতা এসেছে আজ!
তোমার বিশাল বপু হ’তে ছিঁড়ে ফেল ভৃত্যের সাজ;
জানু পাতি’ কেন রয়েছ নীরবে অবনত করি মাথা?
কা’রা কাঁধে পিঠে উঠিয়া তোমার—তোমারে দিতেছে ব্যথা?
ঘণ্টা ঝাঁঝর কর্ণে বাজায়ে বধির করেছে কা’রা?
অঙ্কুশ হানি’ অঙ্গে কে তব বহায় রক্ত ধারা?
পাতা:কাব্য-সঞ্চয়ন (সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত).djvu/৩৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।