পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাতায়নিকের পত্র
১৩৩

জয়গান। সেই কাব্যে অন্যায়কারিণী ছলনাময়ী নিষ্ঠুর শক্তির হাতে শিব পরাভূত। অথচ অদ্ভুত ব্যাপার এই যে, এই পরাভবগানকেই মঙ্গলগান নাম দেওয়া হল।

 আজকের দিনেও দেখি আমাদের দেশে সেই হাওয়া উঠেছে। আমরা ধর্মের নাম করেই এক দল লোক বলছি, ধর্মভীরুতাও ভীরুতা। বলছি, যারা বীর, অন্যায় তাদের পক্ষে অন্যায় নয়। তাই দেখি সাংসারিকতায় যারা কৃতার্থ এবং সাংসারিকতায় যারা অকৃতার্থ, দুইয়েরই সুর এক জায়গায় এসে মেলে। ধর্মকে উভয়েই বাধা বলে জানে, সেই বাধা গায়ের জোরে অতিক্রম করতে চায়। কিন্তু গায়ের জোরই পৃথিবীতে সব চেয়ে বড়ো জোর নয়।

 এই বড়ো দুঃসময়ে কামনা করি, শক্তির বীভৎসতাকে কিছুতে আমরা ভয়ও করব না, ভক্তিও করব না; তাকে উপেক্ষা করব, অবজ্ঞা করব। সেই মনুষ্যত্বের অভিমান আমাদের হোক, যে অভিমানে মানুষ এই স্থূল বস্তুজগতের প্রবল প্রকাণ্ডতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে মাথা তুলে বলতে পারে, আমার সম্পদ এখানে নয়; বলতে পারে, শৃঙ্খলে আমি বন্দী হই নে, আঘাতে আমি আহত হই নে, মৃত্যুতে আমি মরি নে; বলতে পারে, যেনাহং নামৃতঃ স্যাম্ কিমহং তেন কুর্যাম। আমাদের পিতামহেরা বলে গেছেন: এতদমৃতমভয়ং শান্ত উপাসীত। যিনি অমৃত, যিনি অভয় তাঁকে উপাসনা করে শান্ত হও। তাদের উপদেশকে আমরা মাথায় লই, এবং মৃত্যু ও সকল ভয়ের অতীত যে শান্তি সেই শান্তিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করি।

 কারো উঠোন চষে দেওয়া আমাদের ভাষায় চূড়ান্ত শাস্তি বলে গণ্য। কেননা উঠোনে মানুষ সেই বৃহৎ সম্পদকে আপন করেছে যেটাকে বলে