পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬২
কালান্তর

ভাগাভাগির দেবতা, সাম্প্রদায়িক দেবতা। অখৃস্টানের প্রতি খৃস্টানের অবজ্ঞা ও অবিচার তার নামের জোরে যত সজীব হয়ে আছে এমন আর-কিছুতে নয়।

 আমাদের দেশে সাধারণত শাক্তধর্মসাধনা এবং বৈষ্ণবধর্মসাধনার মধ্যে দুই স্বতন্ত্র ভাব প্রাধান্য লাভ করেছে। এক সাধনায় পশুবলি এবং মাংসভোজন, অন্য সাধনায় অহিংসা ও নিরামিষ আহার— এটা নিতান্ত নিরর্থক নয়। বিশেষ শাস্ত্রে এই ‘পশু’ এবং অপরাপর মকারের যে ব্যাখ্যাই থা, সাধারণ ব্যবহারে তা প্রচলিত নেই। এইজন্যেই ‘শক্তি’ শব্দের সাধারণ যে অর্থ, যে অর্থ নানা চিহ্নে অনুষ্ঠানে ও ভাবে শক্তিপূজার মধ্যে ওতপ্রোত এবং বাংলাদেশের মঙ্গলকাব্যে যে অর্থ প্রচারিত হয়েছে, আমি সেই অর্থই আমার রচনায় গ্রহণ করেছি।

 একটি কথা মনে রাখতে হবে, দস্যুর উপাস্য দেবতা শক্তি, ঠগীর উপাস্য দেবতা শক্তি, কাপালিকের উপাস্য দেবতা শক্তি। আরো একটি ভাববার কথা আছে, পশুবলি বা নিজের রক্তপাত, এমন-কি, নরবলি স্বীকার করে মানত দেবার প্রথা শক্তিপূজায় প্রচলিত। মিথ্যা মামলায় জয় থেকে শুরু করে জ্ঞাতিশত্রুর বিনাশ-কামনা পর্যন্ত সকলপ্রকার প্রার্থনাই শক্তিপূজায় স্থান পায়। এক দিকে দেবচরিত্রের হিংস্রতা, অপর দিকে মানুষের ধর্মবিচারহীন ফলকামনা, এই দুইয়ের যোগ যে পূজায় আছে, তার চেয়ে বড়ো শক্তিপূজার কথা কোনো বিশেষ শাস্ত্রে নিগূঢ় আছে কি সেটা আমার আলোচ্য ছিল না। শক্তিপূজার যে অর্থ লৌকিক বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত সে অর্থকে অসংগত বলা যায় না; কারণ লোক-প্রচলিত কাহিনী এবং রূপকচিহ্নে সেই অর্থই প্রবল এবং সভ্য ও বর্বর সকল দেশে সকল ভাবেই শক্তিপূজা চলছে— অন্যায় অসত্য সে পূজায় লজ্জিত নয়, লোভ তার লক্ষ্য এবং হিংসা তার পুজোপচার। এই লোভ মন্দ নয়, ভালোই; হিংস্রশক্তি মনুষ্যত্বের পক্ষে অত্যাবশ্যক— এমন-