পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সত্যের আহ্বান
১৯৫

সরকারের দ্বারস্থ হয়েছি সেই উপলক্ষেই আমাদের নৈষ্কর্য্যকে নিবিড়তর করে তুলেছি মাত্র। কারণ, ইংরেজ-রাজ-সরকারের কীর্তি আমাদের কীর্তি নয়; এইজন্য বাহিরের দিক থেকে সেই কীর্তিতে আমাদের যতই উপকার হােক, ভিতরের দিক থেকে তার দ্বারা আমাদের দেশকে আমরা হারাই, অর্থাৎ আত্মার মূল্যে সফলতা পাই। যাজ্ঞবল্ক্য বলেছেন—

ন বা অরে পুত্রস্য কামায় পুত্রঃ প্রিয়াে ভবতি।
আত্মনস্তু কামায় পুত্রঃ প্রিয়াে ভবতি।।

দেশ সম্বন্ধেও এই কথা খাটে। দেশ আমারই আত্মা, এইজন্যেই দেশ আমার প্রিয়— এ কথা যখন জানি তখন দেশের সৃষ্টিকার্যে পরের মুখাপেক্ষা করা সহ্যই হয় না।

 আমি সেদিন দেশকে যে কথা বলবার চেষ্টা করেছিলুম সে বিশেষ কিছু নতুন কথা নয় এবং তার মধ্যে এমন কিছু ছিল না যাতে স্বদেশ- হিতৈষীর কানে সেটা কটু শােনায়। কিন্তু, আর কারাে মনে না থাকতে পারে, আমার স্পষ্টই মনে আছে যে, আমার এই-সকল কথায় দেশের লােক বিষম ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। যারা কটুভাষা-ব্যবসায়ী সাহিত্যিক-গুণ্ডা আমি তাদের কথা বলছি নে, কিন্তু গণ্যমান্য এবং শিষ্টশান্ত ব্যক্তিরাও আমার সম্বন্ধে ধৈর্য রক্ষা করতে পারেন নি। এর দুটি মাত্র কারণ—প্রথম ক্রোধ, দ্বিতীয় লােভ। ক্রোধের তৃপ্তিসাধন হচ্ছে এক রকমের ভােগসুখ; সেদিন এই ভােগসুখের মাতলামিতে আমাদের বাধা অতি অল্পই ছিল— আমরা মনের আনন্দে কাপড় পুড়িয়ে বেড়াচ্ছি, পিকেট করছি, যারা আমাদের পথে চলছিল না তাদের পথে কাটা দিচ্ছি এবং ভাষায় আমাদের কোনাে আব্রু রাখছি নে। এই-সকল অমিতাচারের কিছুকাল পরে একজন জাপানি আমাকে একদিন বলেছিলেন, ‘তােমরা নিঃশব্দে দৃঢ় এবং গৃঢ় ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করতে পার না কেন? কেবলই শক্তির বাজে খরচ করা তাে উদ্দেশ্যসাধনের সদুপায় নয়।’ তার জবাবে সেই জাপানিকে