হল বড়ো কথা এবং সুন্দর কথা, খুঁটিটা তো উপলক্ষ। আমাদের মতো আধুনিক বলে, ‘এখানে বুদ্ধিটাই হল বড়ো কথা, সুন্দর কথা খুঁটিটাও জঞ্জাল, ভক্তিটাও জঞ্জাল।’— ‘কিন্তু আহা, গৃহিণী যখন অশুভ আশঙ্কায় করজোড়ে গলবস্ত্র হয়ে দেবতার কাছে নিজের ডান হাত বাঁধা রেখে আসেন তার কী অনির্বচনীয় মাধুর্য!’— আধুনিক বলে, ‘যেখানে ডান হাত উৎসর্গ করা সার্থক, যেখানে তাতে নেই অন্ধতা, যেখানে তাতে আছে সাহস, সেখানেই তার মাধুর্য কিন্তু যেখানে অশুভ-আশঙ্কা মূঢ়তারূপে দীনতারূপে তার কুশ্রী কবলে সেই মাধুর্যকে গিলে খাচ্ছে, সুন্দর সেখানে পরাস্ত, কল্যাণ সেখানে পরাহত।
আমাদের আর-একটি প্রধান সমস্যা হিন্দু-মুসলমান সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান এত দুঃসাধ্য, তার কারণ দুই পক্ষই মুখ্যত আপন আপন ধর্মের দ্বারাই অচলভাবে আপনাদের সীমানির্দেশ করেছে। সেই ধর্মই তাদের মানববিশ্বকে সাদা কালো ছক কেটে সুস্পষ্ট ভাবে বিভক্ত করেছে— আত্ম ও পর। সংসারে সর্বত্রই আত্মপরের মধ্যে কিছু পরিমাণে স্বাভাবিক ভেদ আছে। সেই ভেদের পরিমাণটা অতিমাত্র হলেই তাতে অকল্যাণ হয়। বুশ্ম্যান-জাতীয় লোক পরকে দেখবা মাত্র তাকে নির্বিশেষে বিষবাণ দিয়ে মারে। তার ফল হচ্ছে, পরের সঙ্গে সত্য মিলনে মানুষের যে মনুষ্যত্ব পরিস্ফুট হয় বুশ্ম্যানের তা হতে পারে নি, সে চূড়ান্ত বর্বরতার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে। এই ভেদের মাত্রা যে জাতির মধ্যে অন্তরের দিক থেকে যতই কমে এসেছে সেই জাতি ততই উচ্চশ্রেণীর মনুষ্যত্বে উত্তীর্ণ হতে পেরেছে। সে জাতি সকলের সঙ্গে যোগে চিন্তার, কর্মের চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করতে পেরেছে।
হিন্দু নিজেকে ধর্মপ্রাণ বলে পরিচয় দেয়, মুসলমানও তাই দেয়। অর্থাৎ ধর্মের বাহিরে উভয়েরই জীবনের অতি অল্প অংশই অবশিষ্ট থাকে। এই কারণে এরা নিজ নিজ ধর্ম-দ্বারাই পরস্পরকে ও জগতের অন্য