চিত্তধর্মকে যুগে যুগে দাবিয়ে রেখেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আজকেকার অবাধ্যতার যুগে এ দিকে ও দিকে তার গােটাকতক ডালপালা বিদ্রোহী হয়ে সাম্যসৌষম্যকে অতিক্রম করে যদি বেরিয়ে পড়বার দুষ্ট লক্ষণ দেখায়, যদি সকলেরই মন আজ আঁধার রাতের ঝিল্লিধ্বনির মতাে মৃদু গুঞ্জনে একটিমাত্র উপদেশমন্ত্রের সমতান অনুকরণ না করে, তা হলে কেউ যেন উদবিগ্ন বা বিরক্ত না হন; কেননা স্বরাজের জন্যে আশা করা তখনি হবে খাটি।
এইজন্যেই কবুল করতে লজ্জা হচ্ছে না (যদিও লােকভয় যথেষ্ট আছে) যে, এ পর্যন্ত চরকার আন্দোলনে আমার মন ভিতর থেকে দোল খায় নি। অনেকে সেটাকে আমার স্পর্ধা বলে মনে করবেন, বিশেষ রাগ করবেন; কেননা বেড়াজালে যখন অনেক মাছ পড়ে, তখন যে মাছটা ফসকে যায় তাকে গাল না পাড়লে মন খােলসা হয় না। তথাপি আশা করি, আমার সঙ্গে প্রকৃতিতে মেলে এমন লােকও অনেক আছেন। তাঁদের সকলকে বাছাই করে নেওয়া শক্ত; কেননা চরকা সম্বন্ধে তাদের সকলের হাত চলে না, অথচ মুখ খুব মুখর বেগেই চলে।
যে-কোনাে সমাজেই কর্মকাণ্ডকে জ্ঞানকাণ্ডের উপরে বসিয়েছে। সেইখানেই মানুষের সকল বিষয়ে পরাভব।
বুদ্ধ থেকে আরম্ভ করে ভারতের মধ্যযুগের সাধু সাধক যাঁদেরই দেখি, যাঁরাই এসেছেন পৃথিবীতে কোনাে মহাবার্তা বহন করে তারা সকলেই অমনস্ক যান্ত্রিক বাহ্যিক আচারের বিরােধী। তারা সব বাধা ভেদ করে কথা কয়েছিলেন মানুষের অন্তরাত্মার কাছে। তারা কৃপনের মতাে,হিসাবি বিজ্ঞ লােকের মতাে এমন কথা বলেন নি যে, আগে বাহ্যিক, তার পরে আন্তরিক—আগে অন্নবস্ত্র, তার পরে আত্মশক্তির পূর্ণতা। তারা মানুষের কাছে বড়াে দাবি করে তাকে বড়াে সম্মান দিয়েছিলেন; আর সেই বড়াে সম্মানের বলেই তার অন্তর্নিহিত প্রচ্ছন্ন সম্পদ বিচিত্র ভাবে