পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭০
কালান্তর

বিস্তৃত। নিজের চরকায় নিজের সুতাে কাটবার স্বাধীনতা আমাদের আছে। কাটি নে তার কারণ কলের সুততার সঙ্গে সাধারণত চরকার সুতাে পাল্লা রাখতে পারে না। হয়তাে পারে, যদি ভারতের বহু কোটি লােক আপন বিনা মূল্যের অবসরকাল সুতাে কাটায় নিযুক্ত করে চরকার সুতাের মূল্য কমিয়ে দেয়। এটা যে সম্ভবপর নয় তার প্রমাণ এই যে, বাংলাদেশে যাঁরা চরকার পক্ষে লেখনী চালাচ্ছেন তারা অনেকেই চরকা চালাচ্ছেন না।

 দ্বিতীয় কথা হচ্ছে এই যে, দেশে সকলে মিলে চরকা চালালে অর্থ কষ্ট কিছু দূর হতে পারে, কিন্তু সেও স্বরাজ নয়। না হােক, সেটা অর্থ বটে তাে। দরিদ্রের পক্ষে সেই বা কম কী? দেশের চাষিরা তাদের অবসরকাল বিনা উপার্জনে নষ্ট করে; তারা যদি সবাই সুতাে কাটে তা হলে তাদের দৈন্য অনেকটা দূর হয়।

 স্বীকার করে নেওয়া যাক, এও একটা বিশেষ সমস্যা বটে। চাষিদের উদ্বৃত্ত সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে। কথাটা শুনতে যত সহজ তত সহজ নয়। এই সমস্যার সমাধানভার যদি নিতেই হয়, তবে এ সম্বন্ধে বুদ্ধির দুরূহ সাধনা দরকার। সংক্ষেপে বলে দিলেই হল না ওরা চরকা কাটুক।

 চাষি চাষ করা কাজের নিয়ত অভ্যাসের দ্বারা আপনার মনকে ও দেহকে একটা বিশেষ প্রবণতা দিয়েছে। চাষের পথই তার সহজ পথ। যখন সে চাষ করে তখনি সে কাজ করে, যখন চাষ করে না তখন কাজ করে না। কুঁড়ে বলে কাজ করে না, এ অপবাদ তাকে দেওয়া অন্যায়। যদি সম্বৎসর তার চাষ চলতে পারত, তা হলে বছর ভরেই সে কাজ করত। চাষ প্রভৃতি হাতের কাজের প্রকৃতিই এই যে তাতে চালনার অভাবে মনকে নিশ্চেষ্ট করে দেয়। একটা চিরাভ্যস্ত কাজের থেকে আর-একটা ভিন্ন প্রকৃতির কাজে যেতে গেলেই মনের সক্রিয়তা চাই। কিন্তু চাষ