পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৪
কালান্তর

দেখানাে সহজ। চায়ের দোকান করতে গিয়ে আমি যে নিজেকে সর্বস্বান্ত করতে পারি তার কারণ এ নয় যে, সুযােগ্য চা-ওয়ালার মতাে আমার বুদ্ধি নেই, তার কারণ চা-ওয়ালার মতাে আমার মন নেই। অতএব হিতৈষী বন্ধু যদি আমাকে ডিটেকটিভ গল্প লিখতে বা স্কুলকলেজপাঠ্য বিষয়ের নােট লিখতে বলে, তবে নিতান্ত দায়ে ঠেকলে হয়তাে সেটা চেষ্টা দেখতে পারি। আমার বিশ্বাস চায়ের দোকান খােলার চেয়ে তাতে আমার সর্বনাশের সম্ভাবনা কম হবে। লাভের কথায় যদি বা সন্দেহ থাকে, অন্তত এ কথাটা নিশ্চিত যে সাহিত্যিকের মনটাকে কাব্যের লাইন থেকে ডিটেকটিভ গল্পের লাইনে সুইচ করে দেওয়া দুঃসাধ্য নয়।

 চিরজীবন ধরে চাষির দেহমনের যে শিক্ষা ও অভ্যাস হয়েছে তার থেকে তাকে অকস্মাৎ ঠেলে ফেলে দিয়ে তাকে সুখী বা ধনী করা সহজ নয়। পূর্বেই বলেছি, মনের চর্চা যাদের কম গোঁড়ামি তাদের বেশি, সামান্য পরিমাণ নূতনত্বেও তাদের বাধে। নিজের প্ল্যানের অত্যন্ত সহজত্বের প্রতি অনুরাগবশত মনস্তত্ত্বের এই নিয়মটা গায়ের জোরে লঘন করবার চেষ্টা করলে তাতে মনস্তত্ত্ব অবিচলিত থাকবে, প্ল্যানটা জখম হবে।

 চাষিকে চাষের পথে উত্তরােত্তর অধিক পরিমাণে চরিতার্থ করবার চেষ্টা অন্যান্য কোনাে কোনাে কৃষিক্ষেত্রবহুল দেশে চলেছে। সে-সব জায়গায় বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি খাটিয়ে মানুষ চাষের বিস্তর উন্নতি করেছে। আমাদের দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, তারা তাদের জমি থেকে আমাদের চেয়ে দ্বিগুণ চারগুণ বেশি ফসল আদায় করছে। এই জ্ঞানালােকিত পথ সহজ পথ নয়, সত্য পথ। এই পথ-আবিষ্কারে মনুষ্যত্বের প্রমাণ হয়। চাষের উৎকর্ষ-উদ্ভাবনের দ্বারা চাষির উদ্যমকে ষোলাে-আনা খাটাবার চেষ্টা না করে তাকে চরকা ঘােরাতে বলা শক্তিহীনতার পরিচয়। আমরা চাষিকে অলস বলে দোষ দিই, কিন্তু তার অবস্থার উন্নতিসাধনের উদ্দেশ্যে আমরা যখন তাকে চরকা ধরতে