পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৬
কালান্তর

দেখলুম। দেশে বিদেশে এরা শূদ্রধর্ম পালন করছে। চীনকে অপমানিত করবার ভার প্রভুর হয়ে এরা গ্রহণ করেছে; সে সম্বন্ধে এরা কোনাে বিচার করতেই চায় না, কেননা এরা শূদ্রধর্মের হাওয়ায় মানুষ। নিমকের সহজ দাবি যত দূর পৌছায় এরা সহজেই তাকে বহু দূরে লঘন করে যায়; তাতে আনন্দ পায়, গর্ব বােধ করে।

 চীনের কাছ থেকে ইংরেজ যখন হংকং কেড়ে নিতে গিয়েছিল তখন এরাই চীনকে মেরেছে। চীনের বুকে এদেরই অস্ত্রের চিহ্ন অনেক আছে— সেই চীনের বুকে যে চীন আপন হৃদয়ের মধ্যে ভারতবর্ষের বুদ্ধদেবের পদচিহ্ন ধারণ করেছিল, সেই ইংসিং হিউয়োঙের চীন।

 মানববিশ্বের আকাশে আজ যুদ্ধের কালাে মেঘ চার দিকে ঘনিয়ে এসেছে। এ দিকে প্যাসিফিকের তীরে ইংরেজের তীক্ষ্ণচঞ্চুখরনখরদারুণ শ্যেনতরণীর নীড় বাঁধা হচ্ছে। পশ্চিম মহাদেশে দিকে দিকে রব উঠেছে। যে, এশিয়ার অস্ত্রশালায় শক্তিশেল-তৈরি চলছে, য়ুরােপের মর্মের প্রতি তার লক্ষ। রক্তমােক্ষণক্লান্ত পীড়িত এশিয়াও ক্ষণে ক্ষণে অস্থিরতার লক্ষণ দেখাচ্ছে। পূর্বমহাদেশের পূর্বতম প্রান্তে জাপান জেগেছে, চীনও তার দেওয়ালের চার দিকে সিধ কাটার শব্দে জাগবার উপক্রম করছে। হয়তাে একদিন এই বিরাটকায় জাতি তার বন্ধন ছিন্ন করে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করবে, হয়তাে একদিন তার আফিমে-আবিষ্ট দেহ বহু কালের বিষ ঝেড়ে ফেলে আপনার শক্তি উপলব্ধি করতে পারবে। চীনের থলিঝুলি যারা ফুটো করতে লেগেছিল তারা চীনের এই চৈতন্যলাভকে য়ুরােপের বিরুদ্ধে অপরাধ বলেই গণ্য করবে। তখন এশিয়ার মধ্যে এই শূদ্র ভারতবর্যের কী কাজ? তখন সে য়ুরােপের কামারশালায় তৈরি লােহার শিকল কাঁধে করে নির্বিচারে তার প্রাচীন বন্ধুকে বাঁধতে যাবে। সে মারবে, সে মরবে। কেন মারবে, কেন মরবে, এ কথা প্রশ্ন করতে তার ধর্মে নিষেধ। সে বলবে: স্বধর্মে হননং শ্রেয়ঃ, স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়। ইংরেজ-সাম্রাজ্যের