পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রায়তের কথা

শ্রীমান প্রমথনাথ চৌধুরী কল্যাণীয়েষু

আমাদের শাস্ত্রে বলে, সংসারটা ঊর্ধ্বমূল অবাকশাখ। উপরের দিক থেকে এর শুরু, নীচে এসে ডালপালা ছড়িয়েছে; অর্থাৎ নিজের জোরে দাঁড়িয়ে নেই, উপরের থেকে ঝুলছে। তােমার রায়তের কথা’ পড়ে আমার মনে হল যে, আমাদের পলিটিক্সও সেই জাতের। কগ্রেসের প্রথম উৎপত্তি-কালে দেখা গেল, এই জিনিসটি শিকড় মেলেছে উপরওয়ালাদের উপর মহলে- কি আহার কি আশ্রয় উভয়েরই জন্যে এর অবলম্বন সেই উর্ধ্বলােকে।

 যাঁদের আমরা ভদ্রলােক বলে থাকি তারা স্থির করেছিলেন যে রাজপুরুষে ও ভদ্রলােকে মিলে ভারতের রাজগদি ভাগাভাগি করে নেওয়াই পলিটিকস। সেই পলিটিসে যুদ্ধবিগ্রহ সন্ধিশান্তি উভয় ব্যাপারই বক্তৃতামঞ্চে ও খবরের কাগজে, তার অস্ত্র বিশুদ্ধ ইংরাজি ভাষা— কখনাে অনুনয়ের করুণ কাকলি, কখনাে বা কৃত্রিম কোপের উত্তপ্ত উদ্দীপনা। আর, দেশে যখন এই প্রগলভ বাগবাত্যা বায়ুমণ্ডলের উর্ধ্বস্তরে বিচিত্র বাম্পলীলা-রচনায় নিযুক্ত তখন দেশের যারা মাটির মানুষ তারা সনাতন নিয়মে জন্মাচ্ছে মরছে, চাষ করছে, কাপড় বুনছে, নিজের রক্তে মাংসে সর্বপ্রকার স্থাপদ-মানুষের আহার জোগাচ্ছে, যে দেবতা তাদের ছোঁওয়া লাগলে অশুচি হন মন্দির প্রাঙ্গণের বাইরে সেই দেবতাকে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করছে, মাতৃভাষায় কাদছে হাসছে, আর মাথার উপর অপমানের মুষলধারা নিয়ে কপালে করাঘাত করে বলছে ‘অদৃষ্ট’। দেশের সেই পােলিটিশান্ আর দেশের সর্বসাধারণ উভয়ের মধ্যে অসীম দূরত্ব।