পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রায়তের কথা
২৯১

ঘোড়াটাকে জোবার উদ্যোগ বন্ধ রেখে খবর নিতে চাও সে দানা পেলে কি না, ওর দম কতটুকু বাকি। তোমার মন্ত্রণাদাতা বন্ধুদের মধ্যে এমন কি কেউ নেই যে তোমাকে বলতে পারে ‘আগে গাড়ি টানাও, তা হলেই অমুক শুভ লগ্নে গম্যস্থানে পৌঁছবই— তার পরে পৌছবা মাত্রই যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে খবর নেবার জন্যে যে, ঘোড়াটা সচল না অচল, বেঁচে আছে না মরেছে’? তোমার জানা উচিত ছিল, হাল আমলের পলিটিক্‌সে টাইম্‌টেব্‌ল্‌-তৈরি, তোরঙ্গ গুছিয়ে গাড়িতে চড়ে বসাই প্রধান কর্তব্য। অবশেষে গাড়িটা কোনো জায়গাতেই পৌঁছয় না বটে কিন্তু সেটা টাইমটেবলের দোষ নয়; ঘোড়াটা চললেই হিসেব ঠিক মিলে যেত। তুমি তার্কিক; এত বড়ো উৎসাহে বাধা দিয়ে বলতে চাও, ঘোড়াটা যে চলে বহুকাল থেকে সেইটেই গোড়াকার সমস্যা। তুমি সাবেক ফ্যাশানের সাবধানী মানুষ, আস্তাবলের খবরটা আগে চাও। এ দিকে হাল ফ্যাশানের উৎসাহী মানুষ কোবাক্সে চড়ে বসে অস্থির ভাবে পা ঘষছে; ঘরে আগুন লাগার উপমা দিয়ে সে বলছে, অতি শীঘ্র পেীছননা চাই, এইটেই একমাত্র জরুরি কথা। অতএব ঘোড়ার খবর নেওয়া নিছক সময় নষ্ট করা। সব-আগে দরকার গাড়িতে চড়ে বসা। তোমার ‘রায়তের কথা’ সেই ঘোড়ার কথা, যাকে বলা যেতে পারে গোড়ার কথা।



 কিন্তু ভাবনার কথা এই যে, বর্তমান কালে এক দল জোয়ান মানুষ রায়তের দিকে মন দিতে শুরু করেছেন। সব-আগে তারা হাতের গুলি পাকাচ্ছেন। বোঝা যাচ্ছে, তারা বিদেশে কোথাও একটা নজির পেয়েছেন। আমাদের মন যখন অত্যন্ত আড়ম্বরে স্বাদেশিক হয়ে ওঠে তখননা দেখা যায়, সেই আড়ম্বরের সমস্ত মাল-মসলার গায়ে ছাপ মারা আছে