পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৮
কালান্তর

হতে পারে, কিন্তু ছাদ-রক্ষার পক্ষে সুবুদ্ধির কথা নয়। আমাদের সব চেয়ে বড়াে অমঙ্গল বড়াে দুর্গতি ঘটে যখন মানুষ মানুষের পাশে রয়েছে, অথচ পরস্পরের মধ্যে সম্বন্ধ নেই, অথবা সে সম্বন্ধ বিকৃত। বিদেশীর রাজ্যে রাজপুরুষদের সঙ্গে আমাদের একটা বাহ্য যােগ থাকে, অথচ আন্তরিক সম্বন্ধ থাকে না। বিদেশীর রাজত্বে এইটেই আমাদের সব চেয়ে পীড়া দেয়। গায়ে-পড়া যােগটা দুর্বলতা ও অপমান আনে। বিদেশী শাসন সম্পর্কে যদি এ কথা খাটে তবে স্বদেশীয়দের সম্বন্ধে সে আরাে কত সত্য। এক দেশে পাশাপাশি থাকতে হবে, অথচ পরস্পরের সঙ্গে হৃদ্যতার সম্বন্ধ থাকবে না, হয়তাে বা প্রয়ােজনের থাকতে পারে সেইখানেই যে ছিদ্র ছিদ্র নয়, কলির সিংহদ্বার। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যেখানে এতখানি ব্যবধান সেখানেই আকাশ ভেদ করে ওঠে অমঙ্গলের জয়লােরণ। আমাদের দেশে কল্যাণের রথযাত্রায় যখনই সকলে মিলে টানতে চেষ্টা করা হয়েছে, কংগ্রেস প্রভৃতি নানা প্রচেষ্টা-দ্বারা, সে রথ কোথায় এসে থেমে যায় ভেঙে পড়ে? যেখানে গর্তগুলাে হাঁ করে আছে হাজার বছর ধরে।

 আমাদের দেশে যখন স্বদেশী আন্দোলন উপস্থিত হয়েছিল তখন আমি তার মধ্যে ছিলেম। মুসলমানরা তখন তাতে যােগ দেয় নি, বিরুদ্ধ ছিল। জননায়কেরা কেউ কেউ তখন ক্রুদ্ধ হয়ে বলেছিলেন, ওদের একেবারে অস্বীকার করা যাক। জানি, ওরা যােগ দেয় নি। কিন্তু, কেন দেয় নি? তখন বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে এত প্রবল যােগ হয়েছিল যে সে আশ্চর্য। কিন্তু, এত বড় আবেগ শুধু হিন্দু-সমাজের মধ্যেই আবদ্ধ রইল, মুসলমান-সমাজকে স্পর্শ করল না। সেদিনও আমাদের শিক্ষা হয় নি। পরস্পরের মধ্যে বিচ্ছেদের ডােবাটাকে আমরা সমাজের দোহাই দিয়ে গভীর করে রেখেছি। সেটাকে রক্ষা করেও লাফ দিয়ে সেটা পার হতে হবে, এমন আবদার চলে না। এমন কথা উঠতে পারে যে, ডােবা তাে