পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২০
কালান্তর

আজকের দিনে রাষ্ট্রশক্তির উদবোধন হয়েছে বলেই যত ভেদ যত ফাঁক সব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেইজন্যই মার খাচ্ছি। এই মার নানা রূপে আসে কিন্তু, আজ বড়ো করে দেখা দিল এই মহাপুরুষের মৃত্যুতে। মহাপুরুষেরা এই মারকে বক্ষে গ্রহণ করে এর একান্ত বীভৎসতার পরিচয় দেন। তাতেই আমাদের চৈতন্য হয়। এই-যে চৈতন্য এসেছে, রিপুর বশবর্তী হয়ে কি এই শুভ অবসরকে নষ্ট করব, না শুভবুদ্ধিদাতাকে বলব ‘যেখানেই ভেদ ঘটিয়েছি সেখানেই পাপের বেদি গেঁথেছি— তার থেকেই বাঁচাও?

 এই-যে রুদ্রবেশে পাপ দেখা দিল, এ তো ভালোই হয়েছে এক ভাবে। আজকে না ভেবে উপায় নেই যে, কী করে একে চিরকালের মতো পরাভূত করা যেতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে, আশু আমরা কোন উপায় অবলম্বন করব। সহসা এ প্রশ্নের একটা পাকা-রকম উত্তর দিই এমন শক্তি আমার নেই। পরীক্ষা আরম্ভ করে ক্রমে ক্রমে সে উপায় একদিন পাবই। আজকে সেই পরীক্ষা-আরম্ভের আয়োজন। আজকে দেখতে হবে, আমাদের হিন্দুসমাজের কোথায় কোন্ ছিদ্র, কোন্ পাপ আছে; অতি নির্মমভাবে তাকে আক্রমণ করা চাই। এই উদ্দেশ্য মনে নিয়ে আজ হিন্দুসমাজকে আহ্বান করতে হবে; বলতে হবে, ‘পীড়িত হয়েছি, আমরা লজ্জিত হয়েছি, বাইরের আঘাতের জন্য নয়, আমাদের ভিতরের পাপের জন্য। এসো, আজ সেই পাপ দূর করতে সকলে মিলি। আমাদের পক্ষে এ বড়ো সহজ কথা নয়। কেননা, অন্তরের মধ্যে বহু কালের অভ্যস্ত ভেদবুদ্ধি, বাইরেও বহু দিনের গড়া অতি কঠিন ভেদের প্রাচীর। মুসলমান যখন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে মুসলমান-সমাজকে ডাক দিয়েছে, সে কোনো বাধা পায় নি- এক ঈশ্বরের নামে ‘আল্লাহহা আকবর' বলে সে ডেকেছে। আর আজ আমরা যখন ডাকব ‘হিন্দু এসো’, তখন কে আসবে? আমাদের মধ্যে কত ছোটো ছোটো সম্প্রদায়, কত গণ্ডি, কত