পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩০
কালান্তর

আমাদের সম্মিলিত দাবির জোর অক্ষুন্ন রাখাই আপাতত সব চেয়ে গুরুতর প্রয়ােজন বলে তার মনে হতে পারে। দুই পক্ষই আপন আপন জিদে সমান অটল হয়ে বসলে কাজ এগােবে না, এ কথা সত্য। এ ক্ষেত্রে এক পক্ষে ত্যাগ স্বীকার করে মিটমাট হয়ে গেলে উপস্থিত রক্ষা হয়। একেই বলে ডিপ্লোম্যাসি। পলিটিকসে প্রথম থেকেই যােলাে-আনা প্রাপ্যের উপর চেপে বসলে যােলাে-আনাই খােওয়াতে হয়। যারা অদূরদর্শী কৃপণের মতাে অত্যন্ত বেশি টানাটানি না করে আপস করতে জানে তারাই জেতে। ইংরেজের এই গুণ আছে, নৌকাডুবি বাঁচাতে গিয়ে অনেকটা মাল ইংরেজ জলে ফেলে দিতে পারে। আমার নিজের বিশ্বাস, বর্তমান আপসের প্রস্তাবে ইংরেজের কাছে আমরা যে প্রকাণ্ড ক্ষতিস্বীকার দাবি করছি সেটা য়ুরােপের আর কোনাে জাতির কাছে। একেবারেই খাটত না, তারা আগাগােড়াই ঘুষি উচিয়ে কথাটা সম্পূর্ণ চাপা দেবার চেষ্টা করত। রাষ্ট্রনৈতিক ব্যাপারে ইংরেজের সুবুদ্ধি বিখ্যাত; ইংরেজ সবখানির দিকে তাকিয়ে অনেকখানি সহ্য করতে পারে। এই বুদ্ধির প্রয়ােজন যে আমাদের নেই, এ কথা গোঁয়ারের কথা; আখেরে গোঁয়ারের হার হয়ে থাকে। রাষ্ট্রিক অধিকার সম্বন্ধে একগুয়েভাবে দর-কষাকষি নিয়ে হিন্দুমুসলমানে মন-কষাকষিকে অত্যন্ত বেশি দূর এগােতে দেওয়া শত্রুপক্ষের আনন্দবর্ধনের প্রধান উপায়।

 আমার বক্তব্য এই যে, উপস্থিত কাজ-উদ্ধারের খাতিরে আপাতত নিজের দাবি খাটো করেও একটা মিটমাট করা সম্ভব হয় তাে হােক, কিন্তু তবু আসল কথাটাই বাকি রইল। পলিটিকসের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে যেটুকু তালি-দেওয়া মিল হতে পারে সে মিলে আমাদের চিরকালের প্রয়ােজন টিকবে না। এমন-কি, পলিটিক্‌সেও এ তালিটুকু বরাবর অটুট থাকবে এমন আশা নেই, ঐ ফাঁকির জোড়টার কাছে বারে বারেই টান