পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
কালান্তর

থাকে। কাজ করিবার জন্যই তাহাদের জন্ম, কিন্তু কাজের ক্ষেত্র বন্ধ বলিয়া কাজ বন্ধ করিবার কাজেই তাহারা কোমর বাঁধিয়া উঠিয়া পড়িয়া লাগে।

 ইঁহারা কুন্তীসুত কর্ণের মতো। পাণ্ডবের দলে কর্ণের যথার্থ স্থান ছিল, কিন্তু সেখানে অদৃষ্টক্রমে কোনো অধিকার না পাওয়াতে পাণ্ডবদিগকে উচ্ছেদ করাই তাঁহার জীবনের ব্রত হইয়া উঠিয়াছিল। আমরা যাঁহাদের কথা বলিতেছি তাঁহারা স্বভাবতই চলিষ্ণু, কিন্তু এ দেশে জন্মিয়া সে কথাটা তাঁহারা একেবারেই ভুলিয়া বসিয়াছেন— এইজন্য যাঁহারা ঠিক তাঁহাদের এক দলের লোক তাহাদের সঙ্গেই অহরহ হাতাহাতি করিতে পারিলে ইহারা আর-কিছু চান না।

 এই শ্রেণীর লোেক আজকাল অনেক দেখা যায়। ইঁহারা তাল ঠুকিয়া বলেন, স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে!' আক্ষেপ করিয়া বলেন, ‘আমাদের প্রভুদের মানা আছে বলিয়াই আমরা পৌরুষ দেখাইতে পারি। অথচ সমাজের চোখে ঠুলি দিয়া, তাহাকে সরু মোটা হাজার বাঁধনে বাঁধিয়া, মানার প্রকাণ্ড ঘানিতে জুড়িয়া, একই চক্রপথে ঘুরাইবার সব চেয়ে বড়ো ওস্তাদ ইঁহারাই। বলেন, এ ঘানি সনাতন, ইহার পবিত্র স্নিগ্ধ তৈলে প্রকুপিত বায়ু একেবারে শান্ত হইয়া যায়। ইহারা প্রচণ্ড তেজের সঙ্গেই দেশের তেজ-নিবৃত্তির জন্য লাগিয়াছেন; সমাজের মধ্যে কোথাও কিছু ব্যস্ততার লক্ষণ না দেখা দেয়, সেজন্য ইঁহারা ভয়ংকর ব্যস্ত। কিন্তু পারিয়া উঠিবেন না। অস্থিরতার বিরুদ্ধে যে চাঞ্চল্য ইঁহাদিগকে এমন অস্থির করিয়া তুলিয়াছে, সেটা দেশের নাড়ীতে প্রবেশ করিয়াছে তাহার প্রমাণ তাহারা নিজেই। সকালবেলায় জাগিয়া উঠিয়া যদি কেহ কেহ ঘরে আলো আসিতেছে বলিয়া বিরক্ত হইয়া দুড়দাড় শব্দে ঘরের দরজা-জানালাগুলো বন্ধ করিয়া দিতে চায় তবে নিশ্চয় আরো অনেক লোক জাগিবে যাহারা দরজা খুলিয়া দিবার জন্যে উৎসুক হইয়া